যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তো চলছে আপনার সবেমাত্র কলেজে পা দেওয়া মেয়েটি। কিন্তু ওর মনের অবস্থা কেমন, আপনি কি কখনো খতিয়ে দেখেছেন? নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধুত্ব, আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক তো আছেই। তবুও এত কিছুর মাঝেও কেন আপনার বাচ্চা বলে ‘ভাল্লাগে না কিছু’। এই ভালো না লাগার মাঝে আসলেই কী আছে? এক গবেষণায় দেখা গেছে নতুন পরিবেশে তারা অনেক নতুন বিষয়ের সাথে পরিচিত হয়, আর সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে নতুন বন্ধুত্বের ডেইলি অ্যাকটিভিটিজ দেখে বিষণ্ণতায় ভুগে।
এক গবেষনায় দেখা যায়, ৪ থেকে ৫ শতাংশ মেয়েই বেশি বিষন্নতায় ভুগে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উনিশ কুড়ি বয়সে সবার মাঝেই এক ধরণের হরমোনাল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। আর এর ফলেই বিষন্নতায় ভোগে ছেলেমেয়েরা।
উনিশ কুড়ির মন খারাপের ধরনটা হয়ত বড়দের মতন না। একটু আলাদা। তাই গবেষণায় উঠে এসেছে কী কী বিষয় দেখলে বুঝতে পারবেন আপনার সন্তান বিষন্ন?
-সব কিছুতেই বিরক্তভাব
– রাগান্বিত অথবা আগ্রাসী হয়ে কথার উত্তর দিচ্ছে
– সমস্যাগুলো মন খুলে বলতে না পারা
– সমালোচনার আসরে দূর্ব্যাবহার করা
– হঠাৎ করেই খাবার আর ঘুমানোর অভ্যাস পরিবর্তন হয়ে যাওয়া
-পরিবার আর বন্ধু মহলে কোন পরামর্শ না শোনা
গবেষণায় আরও বলা হয় এই বয়সে বিষন্নতা ঝুঁকির পেছনে থাকে পরিবারে বাবা–মার সম্পর্ক। যদি পরিবারে বাবা–মা বিষন্নতায় ভোগে, অবশ্যই সন্তানও বিষন্নতায় আক্রান্ত হবে। এই গবেষণায় আরও যে তিনটি বিষয় চলে আসে তা হলো- আর্থিক সমস্যা, শারীরিক অসুস্থতা, খুব কাছের অর্থাৎ পরিবার অথবা বন্ধুমহলে যৌন হয়রানির শিকার হওয়া।এই কারণগুলো বিষন্নতার জন্য দায়ী।
কেমন করে বিষন্নতা কাটাবেন?
আপনার সন্তানকে প্রথমেই গিয়েই প্রশ্ন করে বসবেন না। কেন তার মন খারাপ, কী হয়েছে। অর্থাৎ বিভিন্ন প্রশ্নের মধ্য দিয়ে জর্জরিত করবেন না। বিষন্নতার নমুনা আগে লক্ষ্য করুন। কী নিয়ে আপনার সন্তান বিষন্নতায় ভুগছে। অনেক প্রশ্ন না করে, আগে ওর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। সন্তানকে সময় দিন এবং পাশে থাকুন।
যখন আপনার সন্তান তার ভালো না লাগার কারণগুলো বলতে শুরু করবে, আপনি তাকে মাঝ পথে থামিয়ে দেবেন না। প্রথমেই তার কথার সমালোচনা করে বসবেন না। তাকে উপদেশ দিতে থাকবেন না। তখন আপনার সন্তান আর মন খুলে তার সমস্যাগুলো আপনাকে বলবে না।
যখন কথা বলবেন সন্তানের দিকে তাকিয়ে বলবেন। যেন আপনাকে এড়িয়ে সে কোনো কথা না বলে। সন্তানকে বোঝান আপনি তার জন্য সম সময় অবসর। তার যে কোন সমস্যা আর সাহায্যের জন্য তার মা-বাবা আছেন।
বিষন্নতা কাটাতে উনিশ কুড়ি কী করবেন?
তারা যদি কিছু কিছু জিনিসের সাথে সব সময় সংযুক্ত থাকে, তাহলে এই ধরণের বিষণ্নতা থেকে তারা মুক্তি পাবে।
– শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন সংগঠনে যুক্ত থাকা।
– বিশ্বস্ত সম্পর্কের মধ্য দিয়ে যাওয়া।
– বিষন্নতা কাটাতে পরিবারের বড়দের উচিৎ হবে তাকে সাহায্য করা।
– নিজের শখ আর পছন্দের বিষয় গুলো খুঁজে বের করা।
– বই পড়া, গাছ লাগানো, গান শুনা, কবিতা আবৃত্তির করা, নিজের যত্ন নেওয়া ইত্যাদি।
একজন নিউট্রিশনিস্ট বলেন, বিষন্নতা কাটাতে অবশ্যই গড়ে প্রতিদিন এক ঘণ্টা ব্যায়াম করতে হবে।
মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য ব্যালেন্স ডায়েট নিতে পারে। যদি বিষন্নতার নমুনা আরও মারাত্বক আকার দেখা দেয়, তাহলে সাইকোথেরাপি নিতে হবে অথবা ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
সব শেষে বলতে হয়, বিষন্নতা আপনার সন্তানের জন্য ঝুঁকি না। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় যদি নমুনাগুলো আপনি বুঝতে পারেন, তাহলে অবশ্যই আপনার সন্তান অনেক বড় ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে।