বৃহস্পতিবার বন্যার্তদের জন্য শাহবাগে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হওয়ার পরদিন এ বিষয়ে প্রেস কনফারেন্স করে ফেরার পথে পুনরায় হামলার শিকার হয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। বন্যা কবলিতদের সহায়তা করতে গিয়ে তার উপর পরপর দু’টি হামলার শিকার হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম বড় মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
তবে এই সমালোচনার পাশাপাশি অনেকে আবার তার উপর এই আক্রমণে খুশি হয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট দিচ্ছেন। তাদের এই খুশি হওয়া এবং এই হামলার সমালোচনা করে সাংবাদিক কবির য়াহমদ এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিষয়টির সমালোচনা করেছেন।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘ইমরান এইচ সরকার সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত অবস্থান অনেকেরই জানা। তবু এসময়ে তাকে আক্রমণ করা দিয়ে কিছু লোকের উল্লাস আর প্রচ্ছন্ন সমর্থনকে সমর্থন করতে পারছি না। এপ্রসঙ্গে যে কথাটা বলতে চাইছি, এখন ছাত্রলীগের কিছু ছেলেপেলে ইমরানকে বিভিন্ন সময়ে আক্রমণ করছে বলে আপনাদের অনেকেই আকারে ইঙ্গিতে এবং অনেকেই প্রকাশ্যে খুশি-ভাব দেখাচ্ছেন, কিন্তু এটা ঠিক হচ্ছে না।
ডিম মারল, নাকি লাঠিসোঁটা দিয়ে মারল সেটা নিয়ে অহেতুক বিতর্কে জড়াচ্ছেন, নাটক বলছেন, আহতদের প্রতিও বিদ্রূপ করছেন- কিন্তু ভেবেছেন কী এসব করতে গিয়ে ফেসবুকে নিজের মানসিকতার যে পরিচয় দিয়ে রেখেছেন মাস ছয়েক পর অথবা এক বছর পর ওসব দেখে আপনাদের নিজেরই লজ্জা লাগবে। অথচ দেখুন এখন কতখানি উল্লাসের ঢঙে বিজ্ঞাপন করে বেড়াচ্ছেন তা।
আজ ছাত্রলীগ মারছে বলে আপনারা খুশি, কাল জঙ্গিরা আক্রমণ করলে একইভাবেই খুশি হবেন কি? এমন প্রশ্নে সরাসরি হয়ত বলবেন- না খুশি হবো কেন। হয়ত বলবেন ওকে জঙ্গিরা মারবে কেন? জঙ্গিরা মারবে কেন, মারবে না- এটা কেউ বলতে পারে না; আর নিশ্চিত করে বলতে চাইলে জঙ্গিদের সঙ্গে আপনাদের আত্মিকযোগকে কি লুকাতে পারবেন?
আপনারা আওয়ামী লীগ করেন, আর জামায়াত-শিবির যাই করেন- ওটা আপনাদের ব্যক্তিগত পছন্দ। এ পছন্দে দেশের সবাইকে সমর্থন করতে হবে এমন ভাবছেন কেন?
আওয়ামী লীগ অথবা জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে ইমরানের অবস্থান এটাকে তার অপরাধ হিসেবে ভাবছেন কেন? এটা সে করতেই পারে, আপনারাও যেমন পারেন আপনাদের দলকে সমর্থন করতে।
আক্রমণের মাধ্যমে আপনাদের চিন্তা, সমর্থন আর মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে জেনে নিন ওটা ভুল তরিকা। ভুল তরিকায় জঙ্গিরা নিজেদের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠায় নামে, আপনারা কেন তাদের তরিকাকে বেছে নেবেন? অথচ অন্য অনেক ইস্যুতে সেই আপনারাই নৈতিকতার যে বিস্ফোরণ ঘটনা সে দুইয়ের পার্থক্য নিজেই নিরূপণ করে দেখুন কোথায় আদতে আপনাদের অবস্থান?
ইমরান যদি জঙ্গি কর্তৃক আক্রান্ত হয় তখনও কি খুশি হবেন? হবেন হয়ত, কারণ কিছু ছাত্রলীগের ছেলে তাকে আক্রমণ করছে বলে আপনারা আনন্দের ডুগডুগি বাজাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে জঙ্গি আক্রমণের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়ায় ব্যত্যয় হওয়ার কথা না। সেক্ষেত্রে জঙ্গিদের মানসিকতার সঙ্গে আপনাদের পার্থক্য থাকল কোথায়? জঙ্গিরা কেবল ত তাদের মতাদর্শের পতাকা উড়াল আর আপনারা সমর্থন করে সে মতাদর্শের পেছনের শক্তি হয়ে থাকলেন। এটাই কি নয়!
ইমরানের ভুল তরিকার কারণে শারীরিক আক্রমণ ও আক্রমণের সমর্থন না করে সমালোচনা করুন, ওটাই হবে আপনার স্থির ও সুস্থ চিন্তার স্মারক। ইমরানকে সমর্থন ও আক্রমণ করে আপনি বড় হবেন না, আপনার অবস্থানের নির্দেশক আপনি নিজেই। নিজেকে দিয়েই নিজের অবস্থানকে পোক্ত করুন!’