দক্ষিণ কোরিয়ায় আমাদের সফর ৫ দিনের। ১৫ থেকে ১৯ ডিসেম্বর। মূলত বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন কোরিয়ার আয়োজনে বিজয় দিবস এবং বিসিকে অ্যাওয়ার্ড-২০১৭ এ আমন্ত্রিত হয়ে এসেছি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের বড় ভাই সরওয়ার কামাল এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এখানে আসা।
সরওয়ার কামাল ভাই গুগলে ভাষা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত আছেন। অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা এবং সহযোগী মনোভাবের ফলে তিনি মাত্র ৩৩ বছর বয়সে কোরিয়ায় বাংলাদেশিদের প্রধান এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে কোরিয়ায় বাংলাদেশিদের একক ফ্লাটফর্ম বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন কোরিয়া (বিসিকে)। সকল দল, মত, ধর্ম, পেশা নির্বিশেষে কোরিয়ায় বসবাসরত সকল বাংলাদেশিকে নিয়ে গঠিত এই সংগঠন পরিচালিত হয় সম্পূর্ণ অরাজনৈতিকভাবে। এ সংগঠনে কর্মজীবী, ব্যবসায়ী, ছাত্র, শিক্ষক, গবেষকসহ বিভিন্ন পেশার বাংলাদেশীরা আছেন। বিদেশের মাটিতে দেশকে সমুন্নত রাখা হবে এই সংগঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
১৭ ডিসেম্বর ছিলো দক্ষিণ কোরিয়ার অত্যাধুনিক শহর ইনছনে অবস্থিত ইনহা ইউনিভার্সিটির হল রুমে বিসিকের মূল অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলার আগে ইনছন নিয়ে কিছু বলা যাক। ইনছন কোরিয়ার প্রধান বন্দর নগরী। এছাড়াও ইনছন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য বিখ্যাত, যেটি সার্ভিসের দিক থেকে বিশ্বের এক নম্বর বিমানবন্দর।
এই শহরের পূর্ব নাম হচ্ছে চেমাল্পো। সিউল থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দূরে উত্তর-পশ্চিমাংশে এই শহরের অবস্থান এবং আধুনিক নৌ যোগাযোগ সুবিধাদি বিদ্যমান। সিউলের সাথে সড়ক ও রেলপথে সংযুক্ত আছে এই শহরটি। পীত সাগর থেকে উদ্ভূত হ্যান নদী তীরবর্তী এলাকায় এই শহর গড়ে উঠেছে। সান ফ্রান্সিসকো, ওয়াশিংটন, মাদ্রিদ ও তেহরানের সাথে একই অক্ষাংশে অবস্থান করছে। সিউল ও বুশানের পর এটি দক্ষিণ কোরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর।
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে ২০০৯ সালের হিসাব অনুযায়ী এখানে প্রায় ২.৬ মিলিয়ন অধিবাসী বসবাস করছেন। ১৮৮৩ সালে জেমালপো বন্দর নির্মাণের সময় এখানে মাত্র ৪,৭০০ জন ব্যক্তি বসবাস করতেন। ইনছনে দশটি প্রশাসনিক জেলা রয়েছে। আটটি ওয়ার্ড (গু) ও দুইটি কাউন্টিতে (গান) শহরকে বিভক্ত করা হয়েছে।
সিউল থেকে ইনছনের ইনহা ইউনিভার্সিটির দূরত্ব প্রায় ৫০ কিমি। যেতে সময় লাগে প্রায় ৪০ মিনিট। ইনহার হল রুমে বিসিকের অনুষ্ঠান শুরু হয় স্থানীয় সময় দুপুর ২টায়। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সারওয়ার কামাল। এরপর শুরু হয় বিসিকে অ্যাওয়ার্ড এবং অতিথিদের বক্তব্য।
প্রতি বছর সংগঠনটি কোরিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে থাকে। এবার ৫ ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে সংগঠনটি। যেমন- অ্যাওয়ার্ড ফর এডুকেশন এন্ড রিসার্চ এ অবদানের জন্য যৌথভাবে – মোহাম্মদ আফছার উদ্দিন ও সাইদুর রহমান সোহাগ, ইপিএস পার্সন অব দ্য ইয়ার -মোহাম্মদ ইয়াসিন, রেমিটেন্স সেন্ডার -শফিকুল ইসলাম।
অ্যাওয়ার্ড ফর আর্টস, কালচার এন্ড স্পোর্টস -বাং দে হান (আসাদুজ্জামান খাঁন) এবং কোরিয়ান অব দ্য ইয়ার হিসেবে পুরস্কৃত হন -লি বিয়ং হিউন। তিনি মূলত একজন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট। তার ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি শুধু বাংলাদেশি ওয়ার্কারদের নিয়ে থাকেন।
এরপর প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব জাহিদ হোসেন ভূঁইয়া। তিনি বিসিকের উদ্যোগ এবং অ্যাওয়ার্ডের প্রশংসা করে এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সভাপতির বক্তব্য রাখেন বিসিকের সভাপতি হাবিল উদ্দীন। তিনি কোরিয়ার একজন ব্যবসায়ী। ৩০ বছর ধরে কোরিয়ায় বাস করছেন।
অ্যাওয়ার্ড প্রদান ও বক্তব্যের পর শুরু হয় কোরিয়ায় বাংলাদেশি স্টুডেন্টদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বিজয়ের গান, নৃত্য, যাদু, জোকসে জমজমাট ছিলো। সবশেষে শুরু হয় ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশনের পরিবেশনা ‘স্পটলাইট’। এর মধ্যে ছিলো রোবটম্যান, ভালোবাসা এবং অতঃপর, জীবন যেখানে যেমন, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সহ বিভিন্ন স্কেচ।
মূকাভিনয় নিয়ে মীর লোকমানের অনুভূতি সুন্দর। তার ভাষায়- ‘নিজ দেশের মানুষদের সামনে বিদেশের মাটিতে পারফরম্যান্স। অন্যরকম অনুভূতি। ধন্যবাদ বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন কোরিয়া (বিসিকে)।’
আমার মূকাভিনয় করাটা একটু অন্যরকম। মূল কাজের পাশাপাশি স্রেফ আনন্দের জন্য মূকাভিনয় শিখি। এ শেখার কোন শেষ নেই। কিন্ত লোকমানের ব্যাপারটি আলাদা। মূকাভিনয় তার পেশা এবং নেশা। সেই পথ ধরে তিনি হেঁটে চলেছেন। এর আগে আমরা দুজন পূর্ব ইউরোপের দেশ আর্মেনিয়ায় আন্তর্জাতিক মূকাভিনয় উৎসবে অংশ নিই ২০১৭ সালের জুলাইতে। সেখানকার অভিজ্ঞতা ছিলো অসাধারণ। প্রথমবার ইউরোপ সফর ছিলো আমাদের।
বছরের শেষান্তে দক্ষিণ কোরিয়ায় আগমনও স্মরণীয় হয়ে থাকবে নির্ঘাত। মাত্র ৫ দিনের সফর হলেও নানা অভিজ্ঞতা অনাগত জীবনের পাথেয় হয়ে থাকবে।