চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ইউরোপে সবচেয়ে বেশি অবৈধ অভিবাসী যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে

অভিবাসী সঙ্কটের চতুর্থ বছরে পাল্টে গেছে ইউরোপে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী ও শরণার্থীদের সংখ্যা। পাল্টেছে নারী-পুরুষ-শিশুর সংখ্যার অনুপাতও। তবে সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো, ইউরোপে নৌপথে লুকিয়ে পৌঁছানোর নতুন একটি পথ আবিষ্কার হয়েছে। আর ইউরোপে যাওয়া শরণার্থীদের সংখ্যায় বর্তমানে এক নম্বরে আছে বাংলাদেশ।

গত বছরের প্রথম তিন মাসে অবৈধ উপায়ে ইতালি পৌঁছেছিল মাত্র একজন বাংলাদেশী। চলতি বছরে ওই সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার ৮শ’ ছাড়িয়ে গেছে বলে এক এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদনে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

এর ফলে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে ইউরোপীয় উপকূলে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি অবৈধ অভিবাসী পাঠানো একমাত্র উৎস দেশ।

এখন পর্যন্ত বিপজ্জনকভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে সিরিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অভিবাসী ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। সংখ্যার দিক থেকে এরপরে রয়েছে যথাক্রমে আফগান, ইরাকি, ইরিত্রিয়ান এবং সাব-সাহারান আফ্রিকানরা।

কিন্তু লিবিয়ার পাচারকারীরা তাদের ভয়াবহ মানব পাচার প্রক্রিয়া সময়ের সাথে সাথে আরও বিস্তৃত করায় এশীয় পাচারকারীরাও আগের তুলনায় বেশি সুযোগ পাচ্ছে।

ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করা বাংলাদেশীরা জানিয়েছে, তারা একেকজন ঢাকা থেকে দুবাই বা তুরস্ক এবং সেখান থেকে লিবিয়া যাওয়ার জন্য পাচারকারীদের ১০ হাজার মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৮ লাখ ১৬ হাজার টাকা করে দিয়েছে। লিবিয়ায় চলমান ভয়াবহ সহিংসতা এবং বিশৃঙ্খলার ফলে সেখানে মানব পাচার চক্র খুব বেশি সক্রিয়। আর তাই সেখান থেকে অবৈধ উপায়ে ইউরোপে যাওয়া তুলনামূলক সহজ বলে উদ্ধারকর্মীদের জানায় তারা।

ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) ইন্ডিপেন্ডেন্টকে জানায়, ইতালিতে পৌঁছানো আশ্রয়প্রার্থীরা এতদিন বেশিরভাগই আসত সাব-সাহারান আফ্রিকা থেকে। কিন্তু নতুন যাত্রাপথটি আবিষ্কারের কারণে তা পাল্টে গেছে।

‘এতে অভিবাসীদের বেশিরভাগ এখন আসছে বাংলাদেশ থেকে,’ বলেন আইওএম-এর মুখপাত্র

এর আগ পর্যন্ত ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাসীদের সবচেয়ে বেশি ছিল সিরিয়া ও সাব-সাহারান অঞ্চলগুলোর

ফ্লাভিও ডি গিয়াকোমো, ‘গত বছরের মার্চের শেষ পর্যন্ত মাত্র একজন বাংলাদেশী ইতালি পৌঁছেছিল। আর এ বছর ওই একই সময়ের মধ্যে সংখ্যাটি বেড়ে ঠেকেছে ২ হাজার ৮৩১ জনে।’

উদ্ধার করে সিসিলি এবং আপুলিয়ায় নিয়ে যাওয়া কয়েকজন অভিবাসী জানান, একটি ‘এজেন্সি’ জনপ্রতি আড়াই থেকে তিন লাখের বেশি টাকার (৩ থেকে ৪ হাজার মার্কিন ডলার) বিনিময়ে ওয়ার্কিং ভিসা দিয়ে তাদের লিবিয়া যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।

আইওএম মুখপাত্র জানান, বাংলাদেশ থেকে অভিবাসীরা বিমানযোগে প্রথমে দুবাই ও তুরস্ক এবং সবশেষে লিবিয়ায় পৌঁছায়। সেখানে বিমানবন্দরে একজন ‘নিয়োগদাতা’ দেখা করে তাদের কাগজপত্র নিয়ে নেয়।

লিবিয়া এবং উপসাগরীয় অঞ্চলে এভাবে কাগজপত্র নিয়ে জোরপূর্বক শ্রমে লাগানো বেশ প্রচলিত একটি ব্যাপার। সেখানে অভিবাসীদের প্রায়ই পাচারকারীরা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে নিয়ে যায়। তারপর তাদের আটকে রেখে দেশে থাকা স্বজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে। অথবা সেই অভিবাসীদেরকে জোর করে যৌনকর্মসহ অন্যান্য কাজে লাগানো হয়।

ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধারকৃত বাংলাদেশীদের কয়েকজন জানিয়েছে, তারা লিবিয়ায় খুব অল্প থেকে শুরু করে প্রায় চার বছরের মতো ছিল। আবার অনেকে জানায়, তারা শুধু ইউরোপে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে লিবিয়ায় কয়েক মাস থেকেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর লিবিয়া বিষয়ক এক সিনিয়র গবেষক হানান সালাহ জানান, ২০১১ সালে লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই দেশটি কাজের খোঁজে থাকা বাংলাদেশীদের গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। গাদ্দাফি সরকার পতনের পর শুরু হওয়া বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠন থেকে শুরু করে পাচারকারীরা উপকূল অঞ্চলে মোটামুটি তল্লাশির ভয় ছাড়াই কাজ চালিয়ে যেতে পারছে।