চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘মোরে চেনো, মুই আইনের লোক’

[সাম্প্রতিক ট্রেন্ড বলছে, লেখাটি পড়ার পর যে কেউ নিজেকে ‘বলদ’ ভেবে আমার নামে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করতে পারেন। যেহেতু তারিক সালমন ন্যায়বিচার পেয়েছেন, আমিও পাবো। মানসিক প্রস্তুতি আছে কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর। তবে বিচার বহির্ভূত কোনো হয়রানির জন্য আমি প্রস্তুত নই। যে কোনো শর্তে ক্ষমা চাই। বরিশালের আলেকান্দার ছেলে হলেও আমি মারামারি-কোপাকুপি খুব ভয় পাই।]

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও সাবেক আমলা সিরাজ উদ্দীন আহমেদ ফেসবুক স্ট্যাটাসে দাবি করেছেন, ‘মামলার বাদী তার নিজ দায়িত্বে মামলা করেছেন, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ তার বেআইনি মামলার দায়ভার গ্রহণ করবে না।’ বাদী নিজ দায়িত্বে মামলা করেছেন’- এটা একটা সুস্পষ্ট রাজনৈতিক মিথ্যাচার। বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. গাউস দাবি করেছেন, ‘পার্টির লোকজনের চাপেই তিনি ইউএনওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ডিসিকে বলেছিলেন।’ ইতিহাসবিদরা রাজনীতিতে জড়ালে ইতিহাস বিকৃতির সুযোগ থাকে!

শুধু ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ ওবায়েদুল্লাহকে সাময়িক বরখাস্ত করেই দায় এড়াতে পারে না বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ। ‘কেঁচো খুঁজতে ডাইনোসর বেরুনো’ এই নাটকীয় ঘটনায় আরো অনেক নায়ক আছে; আছে কেন্দ্রীয় চরিত্রও। তারিকের ওপর এই নির্যাতন প্রথমে শুরু হয় প্রশাসন থেকেই। বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতি ইস্যুতে তাকে শোকজ করেছিলেন বরিশালের জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান। তবে তিনি আমাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আমার নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা বিভাগীয় কমিশনার জনাব মোঃ গাউস স্যারের সুস্পষ্ট নির্দেশে তিনি এই কাজ করেছেন। আর কমিশনার গাউস বলছেন পার্টির লোকজনের কথা।তারিক সালমন

তবে যাই হোক, ইউএনও গাজী তারিক সালমনকে হয়রানির পেছনের গল্পটাও সোশ্যাল মিডিয়ায় এসে গেছে। কবি ও সাংবাদিক শিমুল সালাহ্‌উদ্দিন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মূল নাটের গুরু বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ্ এম.পি। তার আদেশেই হয়েছে সবকিছু। শুনলাম, তিনি নাকি প্রধানমন্ত্রীর ‘কেমন জানি’ আত্মীয় হন। তো জনাব আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ্ সাহেবের ভাই আবদুর রইস সেরনিয়াবাত এর পুত্র পিয়ালকে ডিগ্রী পরীক্ষায় নকলের দায়ে বহিষ্কার করেছিলেন তুচ্ছ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী তারিক সালমন। ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ইউএনওর সাথে অসদাচরণ করায় ছয় মাসের কারাদণ্ডও জুটেছিলো সোনার ছেলের ভাগ্যে।

সেই শাস্তি পেয়েও তার লজ্জা হয়নি। এমনিতে বখাটে সে ছেলের বখাটেপনা বেড়েছে আরো। ইভটিজিং করে বেড়ায় রাস্তাঘাটে, আগৈলঝাড়ার মানুষ তার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। এমপির ভাস্তে সেই সোনার ছেলেকে জেলের ভাত খাওয়ানোর বদলা নিতে হবে না দুইপয়সার ইউএনও-র ওপর! সে সময়ে দেয়া আওয়ামী লীগ সভাপতির হুমকি ‘তোর কিভাবে চাকরি থাকে, আমি দেখবো’র বাস্তবায়ন প্রকল্প ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতি’ মামলা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করেছে কেবল সাজুমিঞারা, যারা জনাব আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর তুচ্ছ-চ্যালামাত্র, কালোকোটপরা পোকার দল, আদেশের চাকর। আর থানাপুলিশ যে এমপিদের কেনা থাকে তা আর কে না জানে এই দেশে! আওয়ামী লীগের এমন যেসব নেতাদের জন্য স্থানীয় প্রশাসন কাজ করতে পারে না, তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা কী নেয়া হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? নাকি ব্যবস্থা কেবল হাতকড়া পরিয়ে লাঞ্ছিত হবার পরই নেয়া হয়, হবে এই দেশে?’

কেবল পুলিশ আর প্রশাসনে ঝড় তুলে বরিশাল আওয়ামী লীগ এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। সামনে হাসনাত আবদুল্লাহর একটা বড় পরীক্ষা আছে। ছেলে সাদেক আবদুল্লাহর সিটি মেয়র নির্বাচন। চাচাতো ভাইয়ের বইখোলা নকল-এক্সপেল-৬ মাসের জেল আবার এই পরীক্ষায় প্রভাব ফেলবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়!

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)