চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আহ! এক কাপ চা!

১৮২৮ সালে চট্টগ্রামের কোদালায় (বর্তমানে যেখানে চট্টগ্রাম ক্লাব) প্রথম চা বাগান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ৷ জমি নেয়া থেকে শুরু করে শ্রমিক নিয়োগ ও চাষের ব্যবস্থার পরে ১৮৪০ সালে সেখানেই পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করা হয় প্রথম চা গাছ৷ তবে প্রথম বাণিজ্যিক চা আবাদ শুরু হয় ১৮৫৪ সালে সিলেটে ৷ সিলেট শহরের উপকণ্ঠে মালনিছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়, যার মাধ্যমে চা উত্‍পাদনের মধ্য দিয়ে চা শিল্পের যাত্রা শুরু হয়৷ সেই থেকে চা শিল্প দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছে। চা শিল্প জিডিপিতে দু’ হাজার ৯৭ কোটি টাকা অবদান রাখার পাশাপাশি গত অর্থবছরে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার চা রপ্তানি হয়েছে। তার ধারাবাহিকতায় রপ্তানি আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে দ্বিতীয়বারের মতো চা প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চা শিল্পের বহুমুখী করণের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন: দেশের অর্থনীতি মজবুত করতে হলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে হবে। ১৯৭০ সালে ৩ কোটি কেজি চা উৎপাদন হতো। ২০২৫ সাল নাগাদ ১৪ কোটি কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। বিভিন্ন ধরণের চায়ের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নানা তথ্য দিয়ে চা শিল্পের প্রতি তার আগ্রহ ও মনোযোগের বিষয়টি ফুটিয়ে তুলেছেন। যেমনটি ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের, বাংলাদেশে চা শিল্পের বিকাশে তার অবদান অবিস্মরণীয়৷ ১৯৫৭-৫৮ সময়কালে তিনি বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন৷ সেইসময় থেকেই ধীরে ধীরে এগোচ্ছে দেশের চা শিল্প। বর্তমানে চা উৎপাদন শুধু সিলেটেই সীমাবদ্ধ না৷ হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ছাড়িয়ে ২০০০ সালে উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়েও ছোট আঙ্গিকে চায়ের চাষ শুরু হয়েছে৷ ২০০৫ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামেও শুরু হয় চায়ের চাষ৷ বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ১৮০টি বড়-ছোট বাগানের প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। গত দশ বছরে পৃথিবীতে চায়ের চাহিদা দ্বিগুণ বেড়েছে৷ এই চাহিদার সাথে সমন্বয় রেখে বাংলাদেশ, কেনিয়া ও শ্রীলঙ্কা পৃথিবীর প্রায় ৫২ ভাগ চায়ের চাহিদা পূরণ করছে৷ এসব দিকে নজর দিলে দেশে চা শিল্পের প্রতি আরও নজর দেয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। চা শিল্পের সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে নানা সমস্যা। চা শিল্পে বিনিয়োগের অভাব যার মধ্যে প্রধানতম। এরপরেই রয়েছে শ্রমিক ইস্যু। দক্ষ জনবলের অভাব ও অতিমাত্রায় কম মজুরির কারণে চা শ্রমিকরা পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। ৩০/৩৫ বছর আগে একজন চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি যেখানে ৭/৮ টাকা ছিল, তা বর্তমানে ৮০/১০০ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। এই অল্প মজুরিতে দিনযাপন করা প্রায় অসম্ভব। মজুরি বাড়ানোর বিভিন্ন দাবি উঠলেও উদ্যোক্তারা অপ্রতুল বিনিয়োগ ও বাজার প্রতিযোগিতার কথা তুলে ধরছেন। বিদ্যমান ব্যাংক ঋণের সুদের হার এত বেশি যে ব্যাংক ঋণ নিয়ে চা বাগানের উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ কঠিন হয়ে পড়ছে তাদের জন্য। সরকার এই খাতে বিভিন্ন ধরণের প্রণোদনা দিচ্ছে, কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকগুলোরও এগিয়ে আসা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সম্ভাবনা ও বাস্তবতার নিরিখে চা শিল্পকে এগিয়ে নিতে সবার ঐকান্তিক চেষ্টা জরুরি বলে আমরা মনে করি। আশা করি, সবাই আন্তরিক হয়ে এই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতকে এগিয়ে নেবেন।