চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আসুন শীতার্ত আদিবাসী মানুষের পাশে দাঁড়াই

এবার শীত জেঁকে বসেছে। সারাদেশ শীতে কাঁপছে। বিশেষ করে উত্তর থেকে ধেয়ে আসা মৌসুমী শৈত্য বায়ু সারাদেশের উপর দিয় প্রবাহিত হওয়ার কারণে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল মৃদু-মাঝারি ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কবলে। আর এটা চলছে জানুয়ারির প্রায় প্রথম সপ্তাহ থেকে। এই শৈত্য প্রবাহের কারণে দেশের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা বিগত প্রায় ৫০-৬০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে অর্থাৎ ২.৬ পৌঁছেছে। এছাড়া অনেক অঞ্চলের দিনের পর দিন সূর্যের দেখা মিলছে না। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে- এই পরিস্থিতি আরও কিছুদিন অর্থাৎ জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত চলবে। কখনও কখনও পরিস্থিতির উন্নতি হলেও তাপমাত্রা কমবেশি একই রকম নিম্ন পর্যায়েই থাকবে।

আমাদের দেশে শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব নেতিবাচকভাবে পড়ে দরিদ্র মানুষের উপর। বিশেষ করে দরিদ্র বয়স্ক এবং শিশুদের জন্য যা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়। পর্যাপ্ত গরম কাপড়ের অভাবে তারা নিতান্ত অসহায় হয়ে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হয়। এবার তাপমাত্রা সর্বনিম্ন পর্যায়ে যাওয়ার কারণে তাদের দুর্ভোগ আরও চরমে পৌছায়। দেশের উত্তর, উত্তর পশ্চিম এবং পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী দরিদ্র মানুষ যারপর নেই কষ্টে রয়েছে। তারা নিজের সবটুকু দিয়ে ঠাণ্ডা মোকাবেলা করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে।

বরাবরের মতোই এবারও সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে শীতার্ত মানুষের মাঝে গরম কাপড় বিতরণ করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ এই শীতে আর্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অল্প। একেকটি অঞ্চলের যে পরিমাণ মানুষের শীতের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন-সেখানে সাহায্যের পরিমাণ খুব বেশী নয়।শীত

আমরা সরকারের বক্তব্যে এবং নানা মিডিয়ায় প্রায়শই দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ফিরিস্তি শুনি। আমরা শুনি দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চলেছে। কিন্তু এই শীতে মানুষের সেই সক্ষমতা কই দেখা যায়? মানুষ তো তার সামর্থ্য দিয়ে শীতকে মোকাবেলা করতে পারছে না। প্রশ্ন আসতে পারে- মানুষ চাইলে গরম কাপড় কিনতে পারে কারণ এখন মানুষের আয় বেড়েছে। কিন্তু একজন শীতার্ত মানুষ যখন শীতের অসহ্য কষ্ট সত্বেও একটি গরম কাপড় কিনতে পারে না তখন বুঝতে হবে তার সামর্থ্য নেই। অথবা তার অন্যান্য অগ্রাধিকার পূরণ করতে গিয়ে সামর্থ্যের সবটুকু শেষ হয়ে যায়।

গত সপ্তাহে আমি উত্তরবঙ্গে পার্বতীপুর উপজেলায় ছিলাম। সেখানে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে গিয়ে দেখেছি-অসংখ্য মানুষ এখনও গরম কাপড় পাবার আশায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছে। দিনাজপুর জেলার ঐ অঞ্চলটি অপেক্ষাকৃত সচ্ছল হওয়া সত্ত্বেও সেখানে বসবাসরত আদিবাসী মানুষের জীবনে পরিবর্তনের ছোঁয়া তেমন লাগেনি। তারা এখনও মাটির ঘরে নিতান্তই আটপৌরে জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। আর দশটা সাধারণ মানুষ থেকে তার বঞ্চনা অনেক অনেক বেশী।

এমতাবস্থায় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিকট (এবং সচ্ছল সকল মানুষের নিকট) একটি মানবিক আবেদন রাখছি-আসুন দরিদ্র ও প্রান্তিক আদিবাসী শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)