মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারের অত্যাচার, নির্যাতন, আগুন, হত্যার শিকার হয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে থাকে। ইতোমধ্যে কক্সবাজারের উখিয়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেছে ১০ লাখের অধিক রোহিঙ্গা। এখনো তাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিচলিত। এসব অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশিবিদেশি অসংখ্য সাহায্য সংস্থা। এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগ তো রয়েছেই। নির্যাতিত এই রোহিঙ্গাদের জন্য সর্বস্তরের মানুষ এগিয়ে এসেছে সাহায্য নিয়ে।
শুরু থেকে বিভিন্ন রকমের সাহায্য পেয়েছে রোহিঙ্গারা। তবে এই শীতে দুশ্চিন্তা ভর করছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে। এক্ষেত্রে বেশি সমস্যায় পড়তে পারে শিশু, বয়স্ক ও গর্ভবতীরা। এ নিয়ে রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর সময় কাটছে প্রচণ্ড দুশ্চিন্তায়। প্রচণ্ড ঠান্ডায় তাদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে কথা হয় চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে। একটি কুঁড়েঘরেই গাদাগাদি করে ১০ জন সদস্য নিয়ে থাকছেন আমেনা বেগম। তিনি বললেন সীমাহীন অসহায়তার কথা।
“আমাদের অনেক সমস্যা। কোনটি বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না। এখন হাড়ি-পাতিল দরকার, মাদুর দরকার। আর শীতের জন্য দরকার কম্বল। এসব না হলে শীতে কিভাবে থাকবো বুঝতে পারছি না। আমাদের এই অসহায় অবস্থা কখন শেষ হবে জানি না”
যেভাবে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে একই ভাবে শীতের কাপড় নিয়েও সাহায্যকারীরা তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিবেন বলে আশা করছেন এই রোহিঙ্গা নারী।
কোলে শিশু সন্তান নিয়ে অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন আরেকজন রোহিঙ্গা নারী আসমা খাতুন। শীতে কি প্রয়োজন হবে এমন প্রশ্নে বলছিলেন, ‘শীতে একটি কম্বল চাইবো, একটি মশারি, একটি মাদুর, আর রান্নার জন্য হাড়ি-পাতিল দরকার হবে’
রোহিঙ্গা তরুণ আবুল কাসেম বলছিলেন শীত নিয়ে নিজেদের দুশ্চিন্তার কথা, ‘পাহাড়ি এলাকায় শীত অনেক বেশি হয়। জানি না কি করবো। একটি কুঁড়েঘরে থাকি। পরিবারে ১২ জন সদস্য। শীতের কাপড় নেই একটাও”!
রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আগমনের পর থেকে রোহিঙ্গাদের পাশে থেকে কাজ করছে দেশি বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা। সহায়তাকারী এসব সংস্থা জানাচ্ছে, শীতে গরম কাপড় দেয়ার পাশাপাশি যা করার, সবই করবে তারা। অসহায় রোহিঙ্গাদের যাতে কষ্ট না হয় সে জন্য তারা পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
যেমনটাই বলছিলেন, মুক্তির প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর আব্দুল্লাহ আল মামুন, “বিভিন্ন সংস্থা কম্বল, ফোম ব্যবস্থা করেছে। শীতের যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে ইতোমধ্যে। শীতজনিত কারণে তাদের সমস্যা হবে না। সবগুলো পরিবারকে সহায়তা করা যাবে বলেই আশা করছি”।
সোস্যাল হেলথ কেয়ার প্র্যাকটিসেস এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফারহানা জানালেন শীতে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় তারা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, শীতের জন্য আমরা ওয়ার্মক্লথ দিচ্ছি। এর বাইরে আমরা শীতজনিত রোগের জন্য যদি মেডিকেল ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন হয় তারও ব্যবস্থা গ্রহণ করে রাখছি’।
জীবন রক্ষার্থেই রোহিঙ্গারা নিজ ভূমি ত্যাগ করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ফিরে এসেছে মৃত্যুর মুখ থেকে। মিয়ানমার সরকারের বর্বোরচিত হামলার শিকার থেকে বেঁচে আসা এসব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ত্রাণ থেকে শুরু করে সব ধরনের সাহায্য পাচ্ছে। তবে শীত নিয়ে তাদের মধ্যে শুরু হয়েছে নতুন করে দুশ্চিন্তা। অসহায় রোহিঙ্গাদের আশা, শীত মৌসুমে তাদের সুস্থ জীবনযাপনের জন্য সহযোগিতা পাবে। এগিয়ে আসবে আসবে মানবতার হাত।