দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংস্থা আসিয়ান সম্মেলনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে যে বিবৃতি পেশ করা হবে, সেখানে চলমান বিশ্বের অন্যতম মানবিক সংকট রোহিঙ্গাদের কথা বাদ দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চলমান নিপীড়ন ও নির্যাতনকে জাতিসংঘ গণহত্যার টেক্সট বইয়ের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং বিভিন্ন মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের উপর চলমান এই জাতিগত নিধন বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে।
সোমবার ওই খসড়া বিবৃতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে রয়টার্স। যেখানে দাবি করা হয় যে খসড়া বিবৃতির একটি প্যারায় ভিয়েতনামে প্রাকৃতিক দুরোগে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য মানবিক সহায়তা দেয়াসহ ফিলিপাইনের শহরগুলোতে ইসলামিক জঙ্গি দমনে অভিযান বিষয়ে বক্তব্য থাকলেও রোহিঙ্গাদের নিয়ে কোন বক্তব্য আসেনি। শুধু রাখাইনের জঙ্গি সমস্যার বিষয়টি একটি লাইনে এসেছে।
মিয়ানমারসহ আসিয়ানের সদস্যদেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে বিবৃতির ওই খসড়া কপিটি তৈরি করেছে ফিলিপাইন। সোমবার এ নিয়ে দেশগুলোর প্রতিনিধিরা ম্যানিলাতে বৈঠক করেন। উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপর চলমান দেশটির সেনাবাহিনীর নির্মম গণহত্যার বিষয়ে বিস্তারিত বক্তব্য আসেনি সেখানে। ইতোমধ্যে যে বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিতে বিশ্বনেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করেছে দেশটির কার্যত নেত্রী অং সান সু চি।
তবে কিছু সদস্যদেশ বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মালেশিয়া বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে কথা বলেছে। যাইহোক, সদস্যদেশের ব্যক্তিগত বিষয়াবলী নিয়ে হস্তক্ষেপ করা যাবে না- সংস্থার এমন নীতির কারণে সহজেই সামিট থেকে বাদ পড়েছে রোহিঙ্গা ইস্যু।
গত সেপ্টেম্বরে আশিয়ানের পক্ষ থেকে ফিলিপাইন রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিবৃতি দিলে তা অস্বীকার করেছিলো মালেশিয়া। কারণ সেখানে রাখাইনে চলমান গণহত্যা বিষয়ে ভুল তথ্য দেয়া হয়েছিলো এবং ঘটনার শিকার হিসেবে রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করা হয়নি।
রোববার ম্যানিলায় পৌঁছে যে বক্তব্য সু চি দিয়েছেন সেখানেও তিনি সুকৌশলে রোহিঙ্গাদের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। ১৯৯৯ সালে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের আন্দোলন করার সময় তিনি তেমনভাবে সহযোগিতা পাননি উল্লেখ করে তিনি আসিয়ানের মূলনীতির সমালোচনা করেন।
দি নেশন পত্রিকায় প্রকাশিত তার এক মন্তব্য কলামে তিনি আসিয়ানের হস্তক্ষেপ না করার নীতির সমালোচনা করে লেখেন, ‘সহযোগিতা না করার জন্য এই নীতি একটি অজুহাত মাত্র। বর্তমান এই সময়ে অন্যদেশের বিষয়সমূহ আপনি অগ্রাহ্য করতে পারবেন না।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ফিলিপাইন প্রতিনিধি উইলনর পাপা এএনসি সংবাদকে বলেছেন, আসিয়ান নেতারা সন্ত্রাসবাদ ও শান্তি এবং নিরাপত্তার বিষয়ে কথা বলবেন। সেখানে উপস্থিত বড় বড় নেতারা হয়তো ইনিয়ে বিনিয়ে কিছুই বলবেন না।