চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আশার ভেলায় ভেসে শেষ দিনের অপেক্ষা

দিনটা আসবে না বলে বঙ্গদেশে যে যুবক হতাশায় টিভি বন্ধ করেছিল, সেই যুবকের আকাশে আশার রোদ ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়! হায়দরাবাদ টেস্ট যে পঞ্চমদিনে গড়িয়েছে! কে ভেবেছিল ভারত ৬৮৭ করার পরেও এই টেস্টে এভাবে ফিরে আসবে বাংলাদেশ। কে ভেবেছিল ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ৩৫৬ রান সামনে রেখে পঞ্চমদিন ব্যাট করতে নামবেন মুশফিকরা।

নিন্দুকের কালো খাতায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস সবসময় প্রাধান্য পায়। ‘শেষ ইনিংসে টাইগাররা দাঁড়াতে পারে না’, এমন বাক্য সেখানে লেখা থাকে মোটা দাগে। এ কথা মিথ্যা হতে পারে, তবে অসত্য কিছু নয়। সত্যের মিশেলে সাকিবদের জন্য ‘অপমান’ মাত্র। সোমবার প্রমাণ করতে হবে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে, অসহায় মরণ বরণ করে না বাঙালি। ‘মর অথবা জেত’ পণ না করলেও “জেত অথবা ‘ড্র’ কর” মন্ত্র মনে গাঁথাই যায়। ওই ‘ড্র’ই যে হবে জয়ের সমান!

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

এই ম্যাচ জিততে হলে বাংলাদেশকে ‘অসাধ্য সাধন’ করতে হবে। কেননা ভারতের মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান তাড়ার সাফল্যটি ৩৮৭ রানের। চেন্নাইতে ২০০৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারত নিজেরাই ঘরের মাঠে রান তাড়ার এই রেকর্ডটি গড়েছিল। যেখানে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংসটিই ৪০০ রানের। নিজেদের প্রথম টেস্টে ভারতের বিপক্ষে এই রান ছুঁয়েছিল বাংলাদেশ। তারপর আর দলটির বিপক্ষে এত রান তোলা সম্ভব হয়নি।

সেই অসম্ভবকেও ‘সম্ভব’ করা সম্ভব, এ কথা হয়তো ভাবা যাচ্ছে না। তবে ‘একটা কিছু হতে পারে’ সেই আশা করতে দোষ কোথায়।

রোববার মিরাজকে হারিয়ে দিন শুরু হয় বাংলাদেশের। নিরাশার মেঘ তখনই উঁকি দিয়েছিল। সেই মেঘ আড়াল করার প্রাণপণ চেষ্টা করেন কাপ্তান মুশফিক। কিন্তু কোহলির আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং পরিকল্পনার সামনে সঙ্গী তাসকিনকে ধরে রাখতে ব্যর্থ হন। তাসকিন ফিরে গেলেও আরেক প্রান্ত থেকে মুশফিক স্কোরটা ৩৮৮ পর্যন্ত টেনে নিয়ে থামেন।

সবাইকে অবাক করে কোহলি ফলোঅন না করানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাটে নেমে পড়েন। ৪ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান পর্যন্ত দীর্ঘ হয় ভারতের ইনিংস। বাংলাদেশের জন্য জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৫৯। তখন হাতে অক্ষত পুরো চারটি সেশন।

ভারত প্রথম ইনিংসে ৬৮৭ রান তোলার পর ‘ডিক্লেয়ার’ করে। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ শুরু থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায়। পরে সাকিব-মুশফিক ১০৭ রানের জুটি গড়লে কিছুটা স্বস্তি ফেরে। এরপর মিরাজকে নিয়ে টাইগার দলপতি নিরাপদে দিন পার করেন। কিন্তু চতুর্থ দিন সেই ছন্দ আর ধরে রাখতে পারেননি।

শেষ বিকেলে দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম (৩) দলীয় ১১ রানে ফিরে যান। সৌম্য ব্যক্তিগত ৪২ রানে বিদায় নেয়ার সময় দলকে রেখে যান ৭১ রানে। যেভাবে খেলছিলেন তাতে দিন পার করা অসম্ভব মনে হচ্ছিল না। কিন্তু ‘ক্ষণিকের ভুলে’ বিপদে পড়েন। মুমিনুলও (২৭) অশ্বিনের সামনে দাঁড়াতে পারেননি। একটি বল ব্যাকফুটে খেলতে যেয়েই শর্ট স্লিপে ধরা পড়েন। সাকিব ২১ ও মাহমুদউল্লাহ ৯ রানে শেষদিনের লড়াই এগিয়ে নিতে নামবেন।

মাঠে অধিনায়ক কোহলির প্রভাব ফুটে ওঠে চোখে লাগার মতো করেই। বারবার ফিল্ডিং পরিবর্তন করে মুশফিকদের বিভ্রান্ত করতে থাকেন। এক পর্যায়ে শর্ট স্লিপে প্রথমে দুইজন। পরে তিনজন। শর্টঅফে একজন। লেগ সাইডেও একজনকে রাখেন। এভাবে চালিয়ে যেতে থাকেন। নিজে ফিল্ডিং করেছেন বোলারের কাছাকাছি। প্রতিটি মুহূর্ত বোলারের চেয়ে তাকেই বেশি অস্থির মনে হয়েছে। শরীরী ভাষায় বাংলাদেশকে কাবু করতে চেয়েছেন। সবাইকে এই মানসিক যুদ্ধে পরাজিত করতে পারলেও সাকিবকে পারেননি। শেষ বিকেলে সচেতনভাবে ফ্রন্টফুট ব্যবহার করেন সাকিব। জাদেজাকে পরপর দুই চার মেরে কোহলির মুখ একবার পানসে বানান।

চ্যাম্পিয়নরা জানেন, ‘অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স’!