পুলিশ পরিচয়ে এক মেয়ের উপর জবরদস্তির ঘটনা ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। তামান্না তারিন নামে একজন ঘটনাটি শেয়ার করেছেন যাতে অন্য মেয়েরা সতর্ক হয়।
পোস্টের শুরুতেই তিনি বলেছেন: ২৪ ঘন্টা লাগলো এই পোস্টটা লেখার মতো শক্তি সঞ্চয় করতে!! প্রতিটা মেয়ে এবং মা-বোন-বউ আছে এমন ছেলেরাও পড়বেন প্লিজ। কখন কার জীবন বেঁচে যায় আমার এই স্ট্যাটাসটা দেখার সুবাদে- বলা যায়না!! শুধুমাত্র অস্বাভাবিক রকম শক্ত মনোবলের অধিকারী করে ছোটবেলা থেকে বড় করার কারণেই সম্ভবত আজকে আমি বেঁচে আছি এবং এই কথাগুলো লিখতে পারছি!!
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি লিখেছেন: ‘রাত ৯টা, সিটি কলেজের পরের গলি, সম্ভবত ধানমন্ডি ৩/এ, যেখানে ভি.আই.পি বাসস্ট্যান্ড, ওই গলির মুখ থেকে রিক্সা নিলাম জিগাতলা যাবো বলে, যায়গাটা অনেকটা ফাঁকাই ছিলো!! তো যাই হোক, রিক্সা চলতে শুরু করতেই একজন মধ্যবয়সী লোক এসে রিক্সা আটকে নিজেকে সিভিল পুলিশ বলে পরিচয় দিয়ে আইডি দেখালো আর রিক্সাওয়ালাকে থামতে আদেশ দিলো। রিক্সাওয়ালা তার কথামতোই কাজ করছিলো, যেহেতু সে পুলিশ বলে বেশ হম্ভিতম্ভি করছিলো!! তারপর আমাকে সে বলা শুরু করলো, ব্যাগ চেক করবে, আমি এই করেছি সেই করেছি নানা কথা!! যখনই দেখলাম তার অসংলগ্ন কমপ্লেইন আমার নামে আমি বললাম ঠিক আছে, গাড়ি আনেন পুলিশের, বাকি কথা থানায় গিয়ে হবে, আমিও আমার গার্ডিয়ান কল দেই, সে ওই অবস্থায় প্রায় জোর করেই রিক্সায় উঠে গেলো এবং আমি বুঝতেসিলাম যে এইটা ছিনতাই বা কিডন্যাপ চক্র!! সে উঠে রিক্সাকে বললো চালাও- রিক্সা চলতে শুরু করলো। সে এত আজেবাজে কথা বলতেসিলো যে রাস্তার এক দুইজন পথচারী খেয়াল করলেও সে ইজিলিইই তাদেরকে বিলিভ করায় ফেলবে যে সে সিভিল পুলিশ এবং আমি খারাপ মেয়ে!! আমি জাস্ট আশপাশ দেখতেসিলাম আর ভাবতেসিলাম আমি কিভাবে জান নিয়ে বাসায় যাবো, কিভাবে আমাকে অজ্ঞান করার আগেই আমি পালাতে পারবো!! এক পর্যায়ে আমি ভাবলাম হট-টকে যাবো না, যদি আমি তর্ক করি, হয়তো সে এটাক করে বসতে পারে, অথবা অজ্ঞানের চেষ্টা করতে পারে। আমি জাস্ট তার কথা শুনতেসিলাম এবং একটু লোকজন আসে এমন জায়গার অপেক্ষা করতেসিলাম!! কথার ফাঁকে আমি বললাম আমি আমার আংকেলকে কল দিচ্ছি আপনি কথা বলেন, উনি একজন এডিশনাল এস.পি। সে তখন রীতিমত চেঁচিয়ে উঠলো এবং খুব উল্টাপাল্টা আচরণ করতে লাগলো- মনে হচ্ছিলো কিছু একটা করে বসবে!! আমাকে বারবার বলা শুরু করলো তার বাসায় যেতে না হয় আমাকে নেক্সট আর খুঁজেও পাবে না কেউ। এক সময় এটাও বললো, আমার গায়ে হাত দেয়া পারমিট করলে সে তখনি নেমে যাবে!! আমি শুধু ভাবতেসিলাম আমি তনুর মতো হারিয়ে যাবো না, যেতে পারিনা!! আমাকে আমার মায়ের কাছে ফিরতেই হবে!! আমি তাকে শান্তভাবে কথা বলতে লাগলাম, এমন ভাব ধরলাম যে আমি অসহায় মেয়ে এবং ভয় পেয়ে কনভিন্সড হয়ে গেসি তার কথা মানতে, এই অবস্থায় দেখলাম রিক্সা স্টার হোটেলের মোড়ের কাছাকাছি এবং আমি ইয়েলোর বিরাট আউটলেট দেখতে পাচ্ছি!! সামনে ৪-৫টা প্রাইভেট কার দেখলাম, আমি জাস্ট এক সেকেন্ডও আর কিচ্ছু না ভেবে শরীরের সমস্ত শক্তি এক জায়গা করে চলন্ত রিক্সা থেকে প্রায় ২-৩ হাত সামনে লাফ দিলাম এবং একটাবারের জন্য আর পিছনে না তাকিয়ে এক দৌড়েই রাস্তা পার হলাম!! একটা বাইক আমার সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে গেলো, লোকটাকে স্যরিও বলতে পারলাম না!! রাস্তা পার হয়ে কিছু দূর দৌড়ে দেখলাম রাইফেলস এর সামনে একটা সিএনজি মাত্রই খালি হচ্ছে, রীতিমত প্যাসেঞ্জারকে ধাক্কায় আমি ভিতরে ঢুকে দরজা আটকায় বললাম, মামা সামনের গলিতে ঢুকেন, ছিনতাইকারী পিছনে!! আল্লাহ্ সহায় ছিলো, লোকটা টান মারলো গাড়িটা!! বাসায় ঢুকলাম ১০ মিনিটের মাঝেই, স্থির হতে হতে প্রায় দুই ঘণ্টা লাগলো, দুই ঘণ্টা পর অনিককে বললাম ঘটনা!!
তিনি এরপর লিখেছেন: অনেক ভয়াবহ একটা এক্সপেরিয়েন্স আমি জাস্ট অল্প কয়টা কথায় লিখলাম। এভাবে পড়ে কেউ হয়তো অনুমানও করতে পারবেন না আমার উপর দিয়ে ওই সময়টুকুতে কি যাচ্ছিলো!! হয়তো বলবেন, আমার উচিত ছিলো নেমে তাকে ধরার ব্যবস্থা করা, লোক জড়ো করা ব্লা ব্লা!! কিন্তু সত্যি বলতে এই আমি, যে কিনা ইভটিজার পিটানোতে ফ্রেন্ডদের মাঝে বলতে গেলে সেই লেভেলের জনপ্রিয়- সেই আমিই ওই মোমেন্টে ওই ব্যাটাকে কিভাবে শায়েস্তা করবো এটা একটাবারের জন্যও ভাবতে পারতেসিলাম না, আমার ওয়ান অ্যান্ড ওনলি চিন্তা ছিলো, আমি বাসায় যাবো, আমাকে আমার বাবা-মা’র কাছে ফিরতেই হবে, আমি আরেকজন তনু হতে পারি না, পারবো না, আমাকে বাঁচতেই হবে!! হ্যাঁ, কালকে আমি পালিয়েই বাঁচছি, ওই ব্যাটাকে ধরায় দেয়ার মতো কিছু করতে পারি নাই, আমার কাছে তখন নিজের ইজ্জত আর জান বাঁচানোটাই ফরয হয়ে গেসিলো!! না হয় হয়তো আজকে আমিও জাতীয় দৈনিকের হেডলাইন থাকতাম, সারাদেশ আমাকে নিয়েও আন্দোলন করতো এবং হায় হায় শব্দে আকাশ বাতাস ভারী করতো- আর দুইদিন পর সবাই এই তারিনকে ভুলে যেত, শুধুমাত্র যে পরিবারটা ধ্বংস হয়ে যেতো সেটা হতো আমার পরিবার!! আমার মা, বাবা, ভাই, হাসবেন্ড, কাছের আত্নীয়রা- শুধুই আমার সবাই!! পারিনি লোকটাকে কিছু করতে, কিন্তু পেরেছি কিডন্যাপড/ রেপড/ মার্ডারড না হয়ে আল্লাহর দেয়া এই জীবনটা নিয়ে বেঁচে ফেরত আসতে!! আল্লাহর শোকর আদায় করে শেষ করা সম্ভব না!! দোয়া চাই সবার, যেন এই দ্বিতীয় জীবন ভালোভাবে শুরু করতে পারি!!
বিঃদ্রঃ হিসেবে সবশেষে তামান্না তারিন লিখেছেন: আমি ডিএসডি গ্রুপে একটা পোস্ট দেখেছিলাম কয়েকমাস আগে, হুবহু এমনই ঘটনা, জাস্ট মেয়েটা রিক্সা থেকে পালাতে পারেনি বলে সিভিল-পুলিশ পরিচয় দেয়া লোকটার খপ্পরে পড়ে ফিজিক্যাল হ্যারাসমেন্ট এবং ছিনতাই- দুটোরই স্বীকার সে হয়েছিলো!! আজকে তাই ভাবলাম যদি আমার এই পোস্ট দেখে একটা মেয়েও এই ব্যাপারে সচেতন হতে পারে বা বিপদে পরলে ঠাণ্ডা মাথায় মোকাবেলার চিন্তা করতে পারে, যদি একজনেরও উপকার হয়- তাতেই হয়তো বেঁচে যাবে আমার পরিবারের মতো আরো একটি পরিবার!!