চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছো নাকি

‘…সুয়া চান পাখি আমার, আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি’- এমন বহু কালজয়ী গানের গায়ক, প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী, গীতিকার ও বংশীবাদক বারী সিদ্দিকী আর নেই। বৃহস্পতিবার রাত দুইটায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে, সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে এবং বাদ আসর নেত্রকোনা সরকারি কলেজ মাঠে তৃতীয় জানাযা শেষে তার নিজ গ্রাম কালিগ্রামের চল্লিশা বাজারের নিজের গড়া ‘বাঊল বাড়িতে দাফন করা হবে এ গুণী শিল্পীকে।

কয়েকদিন আগে থেকেই অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে ছিলেন ‘পূবালী বাতাসে’র এ শিল্পী। সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়।

স্কয়ার হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আবদুল ওহাব খানের তত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তার দুটি কিডনি অকার্যকর। বহুমূত্র রোগেও ভুগছিলেন এ শিল্পী।

গত ১৯ নভেম্বর রাতে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরে মাঝরাতে তাকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলায় এক সঙ্গীতজ্ঞ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বারী সিদ্দিকী। শৈশবে পরিবারের কাছে গান শেখায় হাতেখড়ি হলেও ১২ বছর বয়সেই ওস্তাদ গোপাল দত্তের কাছে তার আনুষ্ঠানিক তালিম শুরু হয়।  এরপর ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ অসংখ্য গুণীশিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন তিনি।

ওস্তাদ আমিনুর রহমান একটি কনসার্টে বারী সিদ্দিকীকে দেখে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন। পরে ছয় বছর ধরে তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমানের কাছে প্রশিক্ষণ নেন।

সত্তরের দশকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাথে যুক্ত হন বারী সিদ্দিকী। ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ক্লাসিক্যাল মিউজিক নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তীতে বাঁশির প্রতিও আগ্রহী হয়ে ওঠে বাঁশি ও উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নেন। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন।

দেশে ফিরে এসে লোকগীতির সাথে ক্লাসিক মিউজিকের সম্মিলনে গান গাওয়া শুরু করেন। ১৯৯৯ সালে বছর হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিতে গান গেয়ে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন দীর্ঘদিন ধরে সঙ্গীত নিয়ে কাজ করা বারী সিদ্দিকী।

তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সুয়াচান পাখি আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি’, ‘পুবালি বাতাসে’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘ওলো ভাবিজান নাউ বাওয়া’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’ ইত্যাদি।