আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। কাছের মানুষগুলোর প্রতি নিজের মনে জমে থাকা ভালোবাসা প্রকাশ করার দিন। শুধু বিশেষ একজন না, পরিবারের সদস্যদেরকেও নিজের ভালোবাসার কথা নতুন করে জানানোর সুযোগ রয়েছে আজকের দিনে।
কিন্তু এই বিশেষ দিনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তারের সব ভালোবাসা শুধু ছোট ভাই ও সহকর্মী জয়নালের জন্য, যাকে ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারবিরোধী মিছিলে হারিয়েছিলেন তিনি। কারণ ১৪ ফেব্রুয়ারি শুধু বিশ্ব ভালোবাসা দিবস নয়, স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসও।
জয়নালের স্মৃতিচারণ করে শিরীন আক্তার ছবিসহ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। সেখানে তিনি লিখেছেন:
‘১৪ ফেব্রুয়ারি। আমার সকল ভালবাসা জয়নালের জন্য। ’৮৩-র মধ্য ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই উত্তাল বিশাল মিছিলে শহীদ জয়নাল, আমার ছোট্ট সাহসী ভাইটি। আমার সহকর্মী। নোয়াখালীর চাটখিল থেকে অনেক স্বপ্ন চোখে নিয়ে এসেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে বলে। মিছিলে মিছিলে মুখরিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন। অবৈধ ক্ষমতা দখল আর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের লড়াই। মজিদ খানের শিক্ষনীতির বিরুদ্ধে এক সেকুলার বৈজ্ঞানিক গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলবার জন্য সেই মিছিল এগিয়ে চলছিল।
১৪ ফেব্রুয়ারির আগের দিন মধুর ক্যান্টিনে এসে আমাকে বলল, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি পড়তে চাই’। আমি হেসে বললাম, নিশ্চয় পড়বে। আগামীকাল মিছিলে এসো। বুঝতে পারিনি আমার এ আহবান ওকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিবে। দুরন্ত সাহসে হেঁটে চলছিল মিছিল। বটতলা থেকে সে মিছিল শিক্ষাভবন। সেখানেই লুটিয়ে পড়েছিল জয়নাল। অনেক যুদ্ধের পর লাশ নিয়ে রাখা হল আর্টস ফ্যাকাল্টিতে। রাজনৈতিক নেতারা আসবেন, দেখবেন। হঠাৎ পুলিশের আক্রমণ ছিনিয়ে নিয়ে গেল জয়নালকে। রাতে কারফিউ। অতপর ———————-
আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি। এই দিনে তাই জয়নালের কথা বার বার মনে পড়ছে। আমি বিশ্বাস করি ভালবাসার চাইতে কোন মারণাস্ত্র শক্তিশালী হতে পারে না। ভালবাসা দিয়েই জয় করতে চাই পৃথিবীর মানবতা।
ভালবাসার উত্তাপে উজ্জীবিত হোক মানবিক বোধ। নির্মূল হয়ে যাক সকল নষ্ট-ভ্রষ্ট চিন্তা।
জয়তু ১৪ ফেব্রুয়ারি।। জয়তু জয়নাল।।’