লন্ডন প্রবাসী শফিক আহমেদের মেয়ে মারজানা এতিম শিশুদের কষ্ট দেখে বাবাকে বলেন, ‘আমাদের অনেক দিয়েছেন মহান আল্লাহ! ওদের জন্য কিছু করো বাবা।’ মেয়ের কথা শুনে আলোড়িত হন বাবা। আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এতিমখানা দেন।
বাংলাদেশ পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি (সিলেট) নজরুল ইসলাম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে জানালেন এতিমখানার কথা। তিনি লিখেছেন, ‘ওরা এতিম। কারো বাবা-মা কেউই নেই। কেউ পরিত্যক্ত। রাস্তাঘাটে অবহেলিত, উপেক্ষিত জীবন ওদের। জীবনের কষাঘাত, বঞ্চনা দুঃখ কষ্ট দেখার, শোনার কেউ ছিল না ওদের। ধরে নিয়ে যায় কেউ কেউ। কাজের বিনিময়ে খাবার দেবে, বড় হলে পয়সা দেবে- এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিশু শ্রমে বাধ্য করেছিল কয়েকজনকে।
ছোট্ট ওই শিশুদের কষ্ট দেখে অন্তর কেঁদে ওঠে লন্ডন প্রবাসী ছাত্রী মারজানার। বাবার কাছে বায়না ধরে মারজানা। “আমাদের অনেক দিয়েছেন মহান আল্লাহ! ওদের জন্য কিছু করো বাবা।” ভাবনাটা ছুঁয়ে যায় বাবা শফিক আহমেদ সাহেবের অন্তর। আলোড়িত হন তিনি। জমি কেনেন। গড়ে তোলেন এতিমখানা। বলতে হবে বালাখানা।
নিভৃত গ্রামে সুন্দর, সুপরিসর, পরিপাটি এক আবাস ভবন। তিনতলা ভবনে ঠাঁই নিয়েছে ১৩৭ শিশু। ধর্মীয় শিক্ষা, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আর প্রযুক্তিগত শিক্ষার এক চমৎকার সমন্বয় গড়ে তুলেছেন তিনি। ক্লাস ফাইভের শিশু অনর্গল কথা বলে ইংরেজিতে, কম্পিউটার ল্যাবে ১০ টি ল্যাপটপ নিয়ে মেতে উঠে প্রযুক্তিগত শিক্ষার সন্ধানে। আবার দু-মাসে কুরআনের হাফেজ হয়েছে এক শিশু।
ডার্লিমপলের লাস্ট মুঘলের কথা মনে পড়ে যায়। “ মাত্র সাত বছরের মাদ্রাসা শিক্ষায় ওরা অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজের মত শিক্ষিত হয়ে বের হয়।” সেই সময়ের ভারতবর্ষীয় মাদ্রাসা শিক্ষাকে ওভাবেই উপস্থাপন করেছেন ওই ইতিহাসবিদ। তখন মাদ্রাসায় ক্যালকুলাস, এস্ট্রোনমি পড়ানো হতো। শফিক আহমেদ ঘোষণা দেন, আমার ছেলেরা ডাক্তার- ইঞ্জিনিয়ার হবে। তবে কি আমি আবু বকর এতিমখানা কাম মাদ্রাসায় সেই হারানো শিক্ষাকে দেখছি? ওই উপসংহার টানার সময় আসেনি।
তবে আমি মানুষ দেখেছি, মনুষ্যত্ব দেখেছি। অসম্ভব খুশি হয়েছি, যখন দেখেছি শিশুগুলো তাদের বাবা-মাকে পেয়েছে। শফিক আহমেদকে তারা বাবা বলে ডাকে। তাঁর সহধর্মীনী ওয়াহিদা রহমান রুবিকে ডাকে মা বলে। বোন মারজানাকে পেলে তো অনেক বায়না আর প্রশ্ন। এমন স্বর্গে বারবার ছুটে যেতে ইচ্ছে হয়।
মনে মনে ভাবি যখন মানুষ অন্যের সম্পদ কেড়ে নিতে ব্যস্ত, তখন নিজের সম্পদ বিলিয়ে দেয়ার আনন্দে বিভোর শফিক আহমেদ। কী পান এখানে? পরমানন্দ! হ্যাঁ , ওই শিশুদের বেড়ে ওঠা, জীবন বিকশিত হবার এক পরম তৃপ্তি ঘিরে আছে তার হৃদয় জুড়ে। তাই বলে এত খরচ করা! যা খরচ করেছি তার বহুগুণ লাভ করেছি এই এতিমখানা প্রতিষ্ঠার পর- বলেছেন লন্ডন প্রবাসী শফিক আহমেদ। আমি পেয়েছি নতুন এক শিক্ষা। মানুষের পাশে, মানবতার পাশে দাঁড়াবার এক তীব্র আকাঙ্ক্ষা কেবলই অন্তর ছুঁয়ে যায়। সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরের কাঁঠাল খায়ের গ্রামে আছে এতিমখানাটি।’
নজরুল ইসলামের ফেসবুক পোস্ট: