ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত ভাস্কর্য ‘অপরাজেয় বাংলা’র ভাস্কর এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত চিত্রশিল্পী সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ জহির। গত সোমবার থেকে তিনি ফুসফুস সংক্রান্ত জটিলতায় রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
সৈয়দ আব্দুল্লাহ জহির বলেন, ‘আমার বাবার ফুসফুসে কার্বনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া অক্সিজেন প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটছিল। আজ সকাল থেকে ফুসফুসের কার্বনের মাত্রা কমতে শুরু করেছে। অক্সিজেন প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে শারীরিক উন্নতি ঘটতে থাকলে আজ সন্ধ্যায় লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হবে বলে ডাক্তার জানিয়েছেন।’
সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ সেন্ট্রাল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসক ডা. সদরুল আলমের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।
জানা গেছে, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে নিজ শহর সিলেটে একটি সম্মাননা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় একটি হাসপাতালে সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদকে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে গত সোমবার রাতে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং পরদিন ভোরে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ বাংলাদেশের একজন স্বনামখ্যাত ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী। ‘অপরাজেয় বাংলা’ ছাড়াও তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে অঙ্কুর, অঙ্গীকার, ডলফিন, এবং মা ও শিশু। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশন কেন্দ্রের সামনে অবস্থিত ম্যুরাল ‘আবহমান বাংলা’ এবং ১৯৯৫-১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান দপ্তরের সামনে অবস্থিত টেরাকোটার ভাস্কর্যও নির্মাণ করেন এই গুণী ভাস্কর।
শিল্পকলা ও ভাস্কর্যে গৌরবজনক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০১৪ সালে শিল্পকলা পদক এবং ২০১৭ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।
আব্দুল্লাহ খালিদ সিলেট জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান কলেজ অফ আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে চিত্রাঙ্কন বিষয়ে স্নাতক এবং পরে ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিত্রাঙ্কন ও ভাস্কর্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাস্কর্য বিভাগে শিক্ষকতা দিয়ে সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭২ সালে সেখানকার প্রভাষক থাকাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর উদ্যোগে কলা ভবনের সামনে নির্মিতব্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক অপরাজেয় বাংলার নির্মাণের দায়িত্ব পান। তিনি ১৯৭৩ সালে ভাস্কর্যটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ১৯৭৯ সালে ১৬ ডিসেম্বর নির্মাণ কাজ শেষে স্থাপনাটির উদ্বোধন করা হয়।