চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘আফসোসটা তুলে রাখলাম আমি’

মাশরাফি বিন মুর্তজা টি-টুয়েন্টিকে বিদায় জানানোর পর থেকে ক্রিকেটপ্রেমীরা তার আচমকা অবসর নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। তবে প্রবাসী ক্রীড়া বিশ্লেষক ফরহাদ টিটো মনে করছেন, ঠিক সময়েই টি-টুয়েন্টিকে বিদায় জানিয়েছেন মাশরাফি। কারণ টি-টুয়েন্টি খুব বেশি তারুণ্যের খেলা, খুব বেশি ফিটনেস আর শারীরিক-মানসিক চাপের খেলা। তার মতে ওডিআই ম্যাশের প্রধান খেলা। আর সেখানেই আমাদের দলটা সত্যিকারের টাইগার।

ছোট ফরম্যাটের ক্রিকেটকে মাশরাফি বিদায় বলার পর ফরহাদ টিটো এক দীর্ঘ ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘কাল সারাটা রাত বাংলাদেশের মিডিয়া ডুবেছিল মাশরাফি নিয়ে। টি-টুয়েন্টি থেকে তার অবসরের ঘোষণা চমকে দিয়েছে সবাইকে। শুধু চমকে দেওয়াই না, কষ্ট দিয়েছে, আহতও করেছে। অভিমানে, আবেগে ভাসিয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আবেগ যদি হয় ক্রিকেট, তাহলে তার বিরাট অংশ জুড়ে আছেন কৌশিক, মাশরাফি বিন মুর্তজা। এমন দিনে বাঙালি তো আবেগের কাছে হার মানবেই।

পেছনে অন্য আরো কারণ ছিল, অন্য কারো হাত ছিল, এইসব অনুমানের চাইতে বেশি সত্য মাশরাফি সারা দুনিয়ার সামনে ঘোষণা দিয়েছেন, সবার প্রতি তার কৃতজ্ঞতার কথা বলেছেন, নতুনদের জায়গা করে দেওয়ার জন্য তার সরে যাওয়ার কথা বলেছেন।

নিজের ফেসবুক পেইজেও মহানুভবতা দেখিয়েছেন মাশরাফি বিদায়ের ঘোষণা দিয়ে।
অনেকে আমার এই কথার সঙ্গে একমত হতে চাইবেন না, জেনেও বলছি- আমার বিচারে ঠিক সময়েই টি-টুয়েন্টিকে বিদায় জানিয়েছেন মাশরাফি।

খুব বেশি তারুণ্যের খেলা, খুব বেশি ফিটনেস আর শারীরিক-মানসিক চাপের খেলা এই টুয়েন্টি-টুয়েন্টি। অন্তত শারীরিক দিক থেকে ম্যাশ অনেকটাই সরে গিয়েছিলেন এই ভার্সন থেকে, সরে গিয়েছিলেন হয়তোবা মানসিক দিক থেকেও। অন্যদিকে চাপও বাড়ছিল ‘পেছন’ থেকে।

আমি বলবো, সবকিছুকে সুন্দরভাবেই ট্যাকল করে ফেলেছেন মাশরাফি, সম্মানের শীর্ষে থাকতে থাকতেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন।

আমার ভয় ছিল, ম্যাশ নিজে থেকে এগিয়ে এসে অবসরের ঘোষণা না দিলে আগামী কোন সিরিজে হয়তো দল থেকেই বাদ দিয়ে দেয়া হতো তাকে, যুক্তি-কারণ দেখিয়ে বা না দেখিয়ে। তেমন অন্ধকার দিন দেখার আগেই নিজের মাথা উঁচু রেখে বিদায় বলে দিলেন তিনি।

মাশরাফির টি-টুয়েন্টি থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তই মেনে নিতে পারছি না আমরা, একদিনের ক্রিকেট থেকে বিদায়ের দিনটা কি করে মেনে নেবো?

আমরা কেন ভুলে যাচ্ছি টি-টুয়েন্টি আমাদের প্রধান ক্রিকেট না, টেস্টও না। আমাদের মূল আইডেন্টিটি ওডিআই ক্রিকেট। আমাদের দলটা সত্যিকারের টাইগার এই ধারার ক্রিকেটে। এবং এটাই ম্যাশের প্রধান খেলা।’

এই ক্রীড়া বিশ্লেষক আরো লিখেছেন, ‘ওডিআই-ক্যাপ্টেন মাশরাফিকে সম্মান করে না বা ভয় পায় না এমন একজন ক্রিকেটারও নেই সারাবিশ্বে, নেই একটা ক্রিকেট দলও। একদিনের ক্রিকেটে মাশরাফি তো এখনো এক ও অদ্বিতীয়, আমাদের ক্রিকেট হৃদয়ের মধ্যমণি। দেশকে এতকিছু দেওয়ার পরও এখনো তো দেওয়ার আছে তার আরো কিছু, ক্রিকেটের এই ফরম্যাটে।

তার অস্ত্রোপচার-বিধ্বস্ত হাঁটুটা যেভাবে চলছে আর পেছন থেকে ম্যানেজমেন্ট নামের যন্ত্রটার চাপ যেভাবে বাড়ছে, তাতে এই ক্রিকেটেও আর খুব বেশি পথ বাকি নেই তার। এমন শঙ্কা জাগছে আমার, তাকে নিয়ে ২০১৯ এর বিশ্বকাপে স্বপ্নের দল সাজাচ্ছি আমরা, কিন্তু আসছে জুনের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেই যদি তার পথ চলা থেমে যায় তাহলে অনেক কষ্ট পাবো, বিস্মিত হবো না।

টি-টুয়েন্টি থেকে মাশরাফির বিদায় নিয়ে আর আবেগ খরচ করবো না আমি, বাকিটুকু জমা রেখে দিলাম সেইদিনের জন্যে যেদিন একদিনের ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন তিনি।

সেদিন চোখেও পানি আসবে আমার। বাংলাদেশের পতাকাটা দেখবো সেদিন বারবার। ফিরে ফিরে দেখবো ম্যাশের মুখটাও। যে মুখের ছায়ায় বাংলাদেশ বেঁচে থাকবে অনন্তকাল।’