আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ ও শাফাত আহমেদের ব্যাংক হিসাব চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মইনুল খানের পক্ষে উপ- পরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেনের গত ১১ মে সাক্ষরিত চিঠিতে জানানো হয়েছে রাজধানীর বনানী এলাকার দি রেইন ট্রি নামীয় আবাসিক হোটেলে একটি ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বর্ণ ব্যবসায়ী মেসার্স আপন জুয়েলার্স এর মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম ও তার ছেলে শাফাত আহমেদ এর চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। কোন কোন তথ্যে দেখা যায়, মেসার্স আপন জুয়েলার্স এর মালিকগণ অবৈধ ব্যবসার আড়ালে ‘ডার্টি মানি’ অর্জন করেছেন, যা মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।
এরই মধ্যে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় শুল্ক গোয়েন্দাদের কাছে এ দুজনের ব্যবসায় অস্বচ্ছলতা থাকার বিষয়টি প্রতীয়মান হয়েছে। যে সব মূল্যবান পণ্য তারা বিক্রি করেন তার বৈধ ঘোষণা ও যথাযথ ট্যাক্স পরিশোধ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে।
উল্লিখিত ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্থাপিত অবৈধ ব্যবসার অভিযোগটি খতিয়ে দেখাটা এখন ‘পাবলিক ডিমান্ড’ হিসেবে দেখছে শুল্ক গোয়েন্দা। শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ এই গুরুতর অভিযোগটি আমলে নিয়ে গভীরভাবে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিষয়ে ইতিমধ্যে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কর্তৃক উপ-পরিচালক এইচ এম শরিফুল হাসান নেতৃত্বে দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে উক্ত প্রতিষ্ঠান ও এর মালিকগণের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্যাদি যাচাই করা প্রয়োজন।
এমতাবস্থায় মের্সাস আপন জুয়েলার্স এবং এই প্রতিষ্ঠানের মালিকগণের (ব্যবসায়িক পরিচয় সংযুক্তি) যাবতীয় আর্থিক লেনদেনের তথ্য জরুরী ভিত্তিতে (এক সপ্তাহের মধ্যে) সরবরাহ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
দি কাস্টমস এ্যাক্ট ১৯৬৯ এর সেকশন ৭ ও ২৬ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ধারা ০৭ অনুযায়ী এ পত্র জারি করা হলো।
এ প্রসঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান গণমাধ্যমকে বলেন: বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে অভিযোগ উঠেছে, বহুল আলোচিত ধর্ষণের ঘটনা চাপা দিতে বিপুল অর্থ খরচের চেষ্টা হয়েছে। এই অর্থের উৎস ‘ডার্টি মানি’ কি না, তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম অস্বচ্ছ কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই দুজনের পাশাপাশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আপন জুয়েলার্সের ব্যাংক হিসাবও তলব করা হয়েছে। অস্বচ্ছতা পাওয়া গেলে দিলদার ও শাফাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।
গত ২৮ মার্চ বনানীতে দ্য রেইনট্রি হোটেলে বন্ধুর মাধ্যমে এক জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী। এরপর ধর্ষকরা ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে রাখে ধর্ষকরা।
যাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে; তাদের একজন সাফাত আহমেদ আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম।
প্রাণনাশসহ বিভিন্ন হুমকি উপেক্ষা করে ঘটনার একমাসের বেশি দিন পর ওই দুই তরুণী ৪ মে বনানী থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করতে যান।
তবে থানা পুলিশ মামলা না নিয়ে তাদেরকে হয়রানী করে বলে অভিযোগ ওঠার ৪৮ ঘণ্টা পর ৬ মে ওই অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে।
গত বৃহস্পতিবার সাফাত ও তার বন্ধু সাদমান সাকিফকে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করার পর পুলিশ তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।