‘কান খোলা রাখুন। আরও কিছু আসছে!’ এভাবেই আরেকটি বড় ঘোষণার আগাম ইশারা দিন দশেক আগে দিয়েছিলেন মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্তকারী সংঘ লাইগোর এক বিজ্ঞানী। একই সময় নোবেলজয়ী দলটির আরেক বিজ্ঞানী এই লেখককে ইমেইলে বলেছেন, ‘এই মাসের মাঝামাঝিতে, ১৬ অক্টোবর লাইগোর আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ খবর আসছে’।
সেই হিসেবে আজ সোমবার মহাঘোষণা দিতে যাচ্ছে লেজার ইন্টারোফেরোমিটার গ্রাভিটেশনাল-ওয়েভ অবজারভেটরি বা লাইগো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে লাইগোর যে দুই বিজ্ঞানী নতুন ঘোষণার কথা জানিয়েছেন, তারা অবশ্য ঠিক কী ঘোষণা করা হবে- সেটাও প্রকাশ করতে চাননি। ফলে আজ সংঘের সংবাদ সম্মেলনের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে।
আইনস্টাইনের অনুমানের একশ বছর পর গত বছর মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিল সহস্রাধিক বিজ্ঞানীর সংঘ লাইগো। স্বীকৃতিস্বরূপ মাত্র দুই বছরের মাথায় এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন সংঘের তিন বিজ্ঞানী- রাইনার উইস, ব্যারি ব্যারিশ ও কিপ থর্ন।
লাইগো এর আগে গত বছর মে মাসে মৌলিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ব্রেকথ্রু পুরস্কার পায়। এই সংঘে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই মার্কিন বিজ্ঞানীও রয়েছেন। এদের একজন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী সেলিম শাহরিয়ার। অপরজন হলেন অরিগন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী দীপঙ্কর তালুকদার।
২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি লাইগো আনুষ্ঠানিকভাবে আাইনস্টাইনের তরঙ্গ ধরার কথা প্রকাশ করেছিল। তবে ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর হচ্ছে ‘বিজ্ঞানের বড়দিন’, যেদিন জার্মানিতে গবেষণাকালে লাইগো ইতালীয় বিজ্ঞানী মার্কো ড্রাগো এই তরঙ্গ প্রথম অবলোকন করেন।
পৃথিবী থেকে কোটি আলোক বর্ষেরও দূরে দুটো কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষে একশ ত্রিশ কোটি বছর আগে জন্ম নিয়েছিল যে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ, সেই ঢেউই শনাক্ত করে লাইগো।
ফেব্রুয়ারিতে প্রথম ঘোষণার পর আবারও মধ্য জুনে বিজ্ঞানীরা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করার খবর দিয়েছেন। এরই মধ্য দিয়ে মৌলিক পদার্থবিজ্ঞানে জন্ম নিয়েছে নুতন এক বিপ্লব, নতুন এক শাস্ত্র। জ্ঞানের নতুন এ ধারাকে বলা হচ্ছে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ জ্যোতির্বিদ্যা। মহাকর্ষীয় তরঙ্গ খুবই দুর্বল। এরা সাধারণত বস্তুর সঙ্গে কোনো মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত হয় না। ফলে আমাদের চারপাশে সব সময় থাকা সত্ত্বেও আমরা তাদের অনুভব করতে পারি না।