সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার মাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলছে। নাসিরনগর,গোবিন্দগঞ্জ,মাধবপুর,ঝালকাঠি,নওগাঁসহ প্রতিটি অঞ্চলের সংখ্যালঘুরাই আতঙ্কিত জীবন যাপন করছে। খবর বেরিয়েছে এসব হামলার সাথে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মন্ত্রী,সাংসদ ও কতিপয় নেতাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে রাজপথে লড়াই-সংগ্রাম করে ক্ষমতাসীন হওয়া দলটির নেতাদের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত।
যুদ্ধাপরাধী,রাজাকার, আলবদরদের পুনর্বাসনকারী বিএনপি জামাতের সাম্প্রদায়িকতাদুষ্ট রাজনীতির বিরুদ্ধে একমাত্র সক্রিয় ও কার্যকর রাজনৈতিক জোট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। রাজনৈতিক লড়াই সংগ্রামে হেরে যাওয়া বিএনপি জামাতের দৈন্যদশায় আওয়ামী লীগের হাতেই এখন একচ্ছত্র ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব। কিন্তু অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলে ক্ষমতায় এলো যে দলটি খোদ সে দলের নেতাদের বিরুদ্ধেই আজ সাম্প্রদায়িকতার প্রকাশ্য অভিযোগ উঠে আসছে।
মানুষ প্রত্যাশা করেছিল সরকার সংবিধান থেকে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বিলুপ্ত করে ধর্মনিরপেক্ষতার যথার্থ প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু তথাকথিত ইসলামপন্থী মৌলবাদীদের খুশি করতে রাষ্ট্র ধর্ম ‘ইসলাম’ তারা বিলুপ্ত করলোনা। বপন করলো সাম্প্রদায়িক ধ্যানধারনার বীজ। হয়তো তার সূত্র ধরেই নেতাকর্মীরা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের আদর্শ থেকে পিছু হটতে শুরু করে। যে রাষ্ট্রের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম লেখা থাকে সে রাষ্ট্র যে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাসী নয় সেটা বুঝতে এত বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার দরকার হয় না। ক্ষমতার বাইরে থাকলে অসাম্প্রদায়িক আর ক্ষমতাসীন হলে সাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগের এমন দ্বৈত চরিত্রই দেখতে পাচ্ছে মানুষ। ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম তাই এ ধর্মটি নিয়ে কোন সমালোচনা করলেই হয়ে যাচ্ছে ধর্মীয় অবমাননা। অন্যদিকে সংখ্যালঘুদের ধর্ম প্রতিষ্ঠানে হামলা করে পায়ে লুটালেও তা হচ্ছেনা ধর্মীয় অবমাননা। ইসলাম ধর্মের কোন বিষয় নিয়ে সমালোচনা করে এপর্যন্ত কতজন গ্রেফতার হলো আর হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কোন বিষয় নিয়ে সমালোচনা করে কতজন গ্রেফতার হলো। এই পরিসংখ্যানেই তা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।
সাম্প্রদায়িক ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী হাজার হাজার নেতা-কর্মী বিএনপি জামাত থেকে এসে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে ৫০০, ১০০০, ২০০০, ৩০০০ জন করে সংশ্লিষ্ট এলাকার সাংসদ ও দলীয় নেতাদের মাধ্যমে সরকার দলে যোগদান করেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই নেতৃত্বের আসনও দখল করেছে। প্রতি উপজেলা হতে যদি গড়ে ১০০০ জন করে যোগদান করে থাকে। ৪৬৪ টি উপজেলা হলে ৪ লাখ ৬৪ হাজার নেতাকর্মীর যোগদান হয়। সেক্ষেত্রে সরকার দল আওয়ামী লীগের মোট সদস্য সংখ্যা কত? সাংসদরা বিভিন্ন এলাকায় ব্যানার টানিয়ে যোগদান অনুষ্ঠান করেছে। অনেক ক্ষেত্রে এসব ব্যানারে শুধু সংশ্লিষ্ট এলাকার সাংসদের ছবিই ছিল। বঙ্গবন্ধু, দলীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কারোরই কোন ছবি ছিলনা।
এই যোগদানকারীরা হঠাৎ কেন বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ প্রীতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে গেল?এই প্রশ্নটা দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে কোনই ক্রিয়া করলো না। নাকি নীতি নির্ধারকরাও তাদের নীতিতে আওয়ামী মুসলিম লীগকেই স্বাগত জানাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন,রাস্তাও মেরামত করা হবে, আওয়ামী লীগও মেরামত করা হবে। তার কথাতে এটা সুস্পষ্ট যে আওয়ামী লীগের আদর্শিক ভিতে ফাটল ধরেছে। এটা মেরামত করার জন্য অভিজ্ঞ ও আদর্শবাদী মিস্ত্রীর দরকার। সারাজীবন আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত থেকেও যেমন অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী হতে পারেন নি এমন মানুষ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে বিএনপি জামাত থেকে সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী অনুপ্রবেশকারীরা।
যেখানে মুক্তিযোদ্ধারাও আওয়ামী লীগ নেতার দ্বারা খুন হন। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আদর্শও কোন পর্যায়ে তা বুঝতে এত তাত্ত্বিক জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। আওয়ামী লীগের এই নৈতিক ও আদর্শিক পশ্চাৎপসরনের মাশুল গুনতে হবে আওয়ামী লীগকে ও গোটা জাতিকে। ইতোমধ্যে সে প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে গেছে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)