চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ভারতীয় কিছু মিডিয়ার আচরণ ভারতকে ছোটই করে

ক্রিকেটটা যেন কখনো কখনো ঠিক খেলা থাকে না, হয়ে ওঠে একটা যুদ্ধ। দুই দেশের খেলা নিয়ে চলে একে অন্যকে আক্রমণ করার প্রচেষ্টা। সেখানে কখনো কখনো চলে অন্যকে আঘাত করে হলেও নিজেকে জাহির করার চেষ্টা। এবার সেই বিষয় নিয়েই ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন চ্যানেল আই অনলাইনের ডিজিটাল ও মাল্টিমিডিয়া এডিটর তৌফিক আহমেদ।

ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, আজ সেমিফাইনাল পুরোটা দেখতে পারিনি। তবে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট মনে হয় দেখে ফেলেছি। বাসায় এসে মুহূর্তের মধ্যে তামিম, মুশফিকের ড্রেসিং রুমের পথে হাঁটা। আবার শুন্য থেকে খেলা শুরু রিয়াদ আর মোসাদ্দেকের। এবং ভারতকে একটা কমফর্টেবল টোটাল উপহার এই ব্যাটিং উইকেটে। বাকিটুকু দেখতে পারিনি সময়ের অভাবে। তবে শেষটুকু দেখে যা বুঝলাম, তা হলো, এরকম ব্যাটিং তাণ্ডবের সামনে কত বড় স্কোর করলে আসলেই জেতা যায়? আর এটাও ঠিক ৩০০ রান করার নিশ্চিত সম্ভাবনা যখন আমাদের হাতছাড়া হয়, তখন আসলে বিগ ম্যাচে বিগ টিমের সামনে খুব বেশি কিছু করার থাকে না। আমি বাংলাদেশের সমালোচনা করছি না মোটেই। আমরা যা পেলাম এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে, সেটি গৌরবময় ইতিহাস। এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে বিশাল ধন্যবাদ দিতে চাই এরকম লড়াকু একটা টুর্নামেন্টে বিশ্বের সেরা দলগুলোর সাথে ফাইট করে সেমিফাইনাল খেলে আসার জন্য। অন্তত এই টুর্নামেন্টে আমরা বিশ্বের প্রথম চারটি দলের একটি, এ কথা মোটেও ভুলে যাওয়া চলবে না। রেকর্ডের পাতায় তাই লেখা থাকবে।

এরপরে তৌফিক আহমেদ আরো লিখেছেন, দুটো বিষয় বলে লেখাটি শেষ করতে চাই। বিরাট কোহলির উত্তেজিত অঙ্গভঙ্গি এবং অ্যাগ্রেশন বুঝিয়ে দেয় ওরা কতোটা মুখিয়ে থাকে আমাদের বিরুদ্ধে জয়ের জন্য। এ কারণেই নিরন্তর স্লেজিং চলে মাঠে এমনকি উইকেট যাওয়ার পরও। সত্যি কথা ওরা এখন পাকিস্তানের সাথে জিতেও হয়তো এত খুশি হয় না। ওরা বুঝেছে এই অঞ্চলে বাংলাদেশই ওদের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই, ভারতীয় মিডিয়াতে আমাদের ক্রিকেট দল নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক সংবাদের অভাব নেই। আমি আম-জনতার ট্রলের বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাই না কারণ সেখানে কারও হাত থাকে না। তবে, জাতীয় মিডিয়াতে বাংলাদেশকে হাস্যকর একটি দল হিসেবে উপস্থাপনের কৌশল আসলে দিনশেষে ভারতের মতো বড় একটি দলকে ছোটই করে। কাগজে-কলমে কোন দিক থেকেই আমরা ওদের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলি না। এটা মেনে নিতে হবেই আপাতত। তবে আমাদের যে উন্নতি হচ্ছে, তাতে খুব দ্রুতই বড় টুর্নামেন্টগুলোতে ফাইনাল খেলে কাপ ঘরে তোলা এখন সময়ের ব্যাপার। উপমহাদেশীয় রক্তের ধারায় এসব ট্রল-ফল এবং আকাম-কুকাম খুব একটা পাত্তা দিলে নিজেদেরই ক্ষতি। তবে মিডিয়া এবং মাঠের দৃশ্য ভোলা কঠিন। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের বোলিং এখন বেশ বড় একটা জিজ্ঞাসাবোধক চিহ্নের সামনে। একই সাথে মোসাদ্দেক আউট হয়ে গেলেই আমরা বুঝতে পারছি মাশরাফি, তাসকিন, মোস্তাফিজ আর রুবেল সত্যিকার অর্থেই খেলাটা আর টানতে পারবে না ব্যাটিং দিয়ে। খুব নির্মম হলেও সত্য, এই জায়গাটায় আমাদের বড় পরিবর্তন আনতে হবে। প্রয়োজনে নতুনভাবে ভাবতে হবে।অন্য দলগুলোর সাত-আট-নয় কারা খেলছে তা একটু খতিয়ে দেখলেই আমার এই বিরূপ কথাটা ধরতে পারা খুব কঠিন নয়। আমাদের ওপেনিং জুটিতে সৌম্যর যে নান্দনিক অবদান তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে, সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করার ব্যাপারে তার আরও একটু মনোযোগী হওয়া উচিত ছিল। তিন নম্বরে ব্যাটিং আসলে কে করবে তা নিয়ে পুরো টুর্নামেন্টেই একটা দ্বিধা-সংকোচ চলেছে। সাব্বির আবারও জ্বলে উঠতে পারলেন না। তিন নম্বরে কাকে নামানো হবে ওডিআইতে, সেই সংকোচ কাটিয়ে পেশাদারি সিদ্ধান্ত নিতে হবে অধিনায়ক, ম্যানেজমেন্টকে।

সবশেষে ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, দিনশেষে এতটুকুই বলব, বাংলাদেশ অনেক অনেক ভালো করেছে। যা আমাদের দিয়েছে এবং যতটুকু দিয়েছে তা নিয়ে আমি গর্বিত। আমি আশাবাদী আরও অনেক ভালো দিনের। আমি স্বপ্ন দেখি আরও অনেক বড় কিছুর। সময়, সঠিক কৌশল এবং যোগ্য খেলোয়াড়েরাই এবং বিশেষ করে যারা স্নায়ুর যুদ্ধে টিকে থাকতে পারে, তারাই আমার এবং আমাদের সবার স্বপ্ন সফল করবেই। দয়া করে ফাইনালে পাকিস্তান আর ভারতের খেলা নিয়ে মাতবেন না। আমি বলি, বরং বাংলাদেশ ফাইনালে গেলে সেটি সবার জন্য আকর্ষণের বিষয় হতো। পাকিস্তান আর ভারতের ভেতর কে জিতলো আর কে হারলো, এটা নিয়ে ভাবার সময় বাংলাদেশের মতো এক বিশাল দলের সমর্থকদের না ভাবাও দেশপ্রেমের অংশ। বাংলাদেশকে সমর্থন করুন আপনার দেশপ্রেমের পুরোটা দিয়ে। পাকিস্তান আর ভারতের ক্রিকেট যুদ্ধ নিয়ে মাতামাতি না করাটাই উত্তম। বিশ বছর আগে ওই দুই দলের খেলা দেখার কারণ ও সময় ছিল। এখন আর নেই। কারণ, বাংলাদেশ যেখানে আছে, সেখানে পৃথিবীর অন্য কোন দলকে নিয়ে মাথাব্যথা না রাখা দেশপ্রেমের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের জন্য নিরন্তর শুভকামনা।