রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানীর গা-ঘেঁষে প্রায় ১৭০ একর আয়তনের বিশাল ‘কড়াইল বস্তি’ অবস্থিত। রোববার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষের ওই বাসভূমিতে, যা গত ৯ মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার। কয়েক ঘন্টায় পুড়ে যায় পাঁচ শতাধিক বাড়ি। ১৯৫৬ সালে তৎকালীন টিএন্ডটি বোর্ডের (বর্তমান বিটিসিএল) জন্য পাকিস্তান সরকার ১৭০ একর জমি অধিগ্রহন করে। কিন্তু বিটিসিএলের দখলে মাত্র ১০ একরের মত জায়গা থাকলেও বাকি পুরো জায়গায় লোকালয়টি গড়ে উঠেছে অবৈধভাবে। বস্তির জমির মালিক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিটিসিএল, গণপূর্ত এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয় হলেও রাজনৈতিক ক্ষমতাধরদের ছায়ায় ওখানে অবৈধ হাতবদল, দখল ও ভাড়া বাণিজ্য এবং মাদকের আখড়া। কড়াইল বস্তির জমির অন্যতম মালিক বিটিসিএল আদালতের আদেশে ২০১২ সালে জমি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা শুরু করে। বেশ প্রস্তুতি নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চললেও হাজার হাজার বস্তিবাসীর প্রতিবাদের মুখে গুলশান-মহাখালী এলাকা কার্যত অচল হয়ে গিয়েছিল, তাই থেমে যায় উচ্ছেদ অভিযান। জাল দলিলচক্র, অবৈধ বাড়িওয়ালা আর বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির নামে জমির অবৈধ মালিকানার দ্বন্দ্ব নিয়ে হত্যাকাণ্ডসহ নানা নাশকতার খবরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন সময় সেখানে লাগা আগুন নিছক দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত নাশকতা তা নিয়ে বিভিন্ন মহলের বিভিন্ন মত। এসব ঘটনায় আর্থিকভাবে একটি অদৃশ্য গোষ্ঠি লাভবান হলেও মানবিক বিপর্যয়ের মুখে আছে গার্মেন্টস কর্মী, হকার, দিনমজুর, ভিক্ষুকসহ ওই বস্তিতে বসবাস করা কয়েক লাখ নিম্নআয়ের মানুষ। এছাড়া চড়াদামে পজেশন নিয়ে ব্যবসা করা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের লগ্নির পরিমাণও উল্লেখ করার মতো। রোববার লাগা অগ্নিকাণ্ডের পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ছাড়াও সেখানে গিয়েছিলেন গণফোরাম নেতা ও দেশের সংবিধান রচয়িতা ড. কামাল হোসেন। শুধু কড়াইল বস্তি নয়, যেকোন বস্তি পুনর্বাসন ছাড়া বস্তিবাসীদের উৎখাত করা যাবে না মর্মে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞাসহ আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে উল্লেখ করে ড. কামাল ওইসব অগ্নিকাণ্ডে পরিকল্পিত নাশকতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সত্যিসত্যিই নাশকতা হয়ে থাকলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। সঙ্গে এটাও চাওয়া: মানবিক দিক মাথায় রেখে আইনের সঠিক ও কার্যকর প্রয়োগ, প্রয়োজনীয় সময় ও পরিকল্পনার পরে বিশাল ওই বস্তির জনগোষ্ঠিকে সুষ্ঠু পুনর্বাসনের মাধ্যমে নাশকতা বন্ধ হোক, বন্ধ হোক বস্তিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অবৈধ বাণিজ্য ও অবৈধ সব কর্মকাণ্ড।