দশ টাকা চুরি করলেও চুরি। আবার ১০ কোটি টাকা চুরি করলেও চুরি। দুজনেই চোর। তবে আমরা এখন কি দেখছি সমাজে?
দশ টাকা চুরির অপরাধে একটি শিশুকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। আবার ১০ কোটি টাকা চুরি করে ঘুরে বেড়ায় দাপটের সাথে। গত চার পাঁচ বছর ধরে আমরা পত্রিকা খুললেই একটি বহুল আলোচিত খবর পাই। তা হলো ব্যাংকের টাকা চুরি। এক লাখ দুই লাখ টাকা না, কোটি কোটি টাকা। তাও কম বলা হল, হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে।
বড় বড় পত্রিকাঅলারা তাদের অনেক দামি জায়গা নষ্ট করেছে সেই চোরদের খবর ছেপে। রাঘব বোয়ালরা সেই চোরদের পেছনে জড়িত সেটাও বোঝা গেছে দুএকদিন পর। কারণ যেই পত্রিকা ওই ধরনের খবর ছেপেছে তাদের আবার সেই খবরের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য ছাপতে হয়েছে।
তার মানে কি দাঁড়াল? আবারও পত্রিকাওয়ালাদের পত্রিকার মূল্যবান জায়গা নষ্ট হয়েছে। রোষানলে পড়েছে পত্রিকাওয়লারা। চোরদের কিছুই হয়নি।
এই হচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের গত কয়েক বছরের চিত্র। আমরা যারা সাধারণ মানুষ, তারা শুধু পড়েছি, জেনেছি, সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্ক গ্রুপ চার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে। বেসিক ব্যাংক থেকে আবদুল হাই বাচ্চুর কেলেঙ্কারি কথা জেনে অবাক হয়েছি। ওই পর্যন্তই, দুদক ডেকেছে বাচ্চু সাহেবকে। পরের দিন বড় বড় পত্রিকায় বাচ্চু সাহেবের হাস্যোজ্জ্বল ছবি ছাপা হয়েছে। যেন তিনি বিশাল কিছু অর্জন করে বেরিয়েছেন দুদক কার্যালয় থেকে। এবং তিনি বলেছেন বেশ দম্ভ নিয়ে, দুদককে তদন্তের স্বার্থে সব ধরণের সহযোগিতা করবেন।
কথা শুনে মনে হয়েছে দুদক বেশ বড় ধরনের বেকায়দায় পড়েছে, বাচ্চু সাহেব তাদের সাহায্য করবে। আমরা যারা সাধারণ মানুষ, তারা শুধু খবর পড়েই ক্ষান্ত। এর সুবিচার দেখবার, বা দেশকে যারা পঙ্গু করে দিচ্ছে, দেশের অর্থনীতির চাকাকে যারা পেছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে ছোট করে দিচ্ছে, তাদের কোনো বিচার হচ্ছে না। বরং তাদের দম্ভ আর আস্ফালন দেখে যাচ্ছি।
আমাদের মন্ত্রী বাহাদুর যখন বলেন এই হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই না, তখন সামান্য আশার বাতিটিও নিভে যেতে থাকে। আমরা ভয়ে কুঁকড়ে যাই। পাছে আবার কোন বিপদ আসে।
ব্যাংকিং খাতে লুটপাটের বা অনিয়মের দিক দিয়ে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তিটি মনে হয় আবদুল হাই বাচ্চু। কি হয়েছে তাঁর? কি হয়েছে তার পরিবারের সদস্যদের? বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকার সময় স্ত্রী-ছেলে-ছেলেদের নামে খুলেছেন ইডেন ফিশারিজ লিমিটেড নামে একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা ব্যাংক হিসেবে মাত্র ১১ মাসেই জমা হয়েছে ১৩ কোটি টাকা। এ টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দেখা যাক কি হয় প্রশ্নে উত্তর খুঁজতে গিয়ে।
আমরা অপেক্ষায় থাকলাম সেই প্রতিবেদনটি পত্রিকায় দেখার।
এমনিভাবে আরও যারা দুর্নীতির সাথে জড়িত তাদের ব্যাপারে আর খবর-টবর আর আজকাল তেমন দেখা যায় না। সব রহস্যময়। আইনের হাত-পা আজকাল বাঁধা হয়ে যাচ্ছে। চোর ধরার কল বসানো দরকার প্রতিটি ব্যাংকে। কে জানে কোথায় হয়ে যাচ্ছে লুটপাট। লুটপাট শেষ হবার আমরা হয়ত জানবো সে খবর।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)।