চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

অসুস্থ মেয়েকে জঙ্গলে ফেলে আসলেন মা

দ্বিতীয়বার কন্যা সন্তানের মা হয়ে হতাশ হয়েছিলেন। সাত মাসের শিশু মৌমিতার পায়ের টিউমার খারাপ দিকে গড়াতে পারে বলে জানায় ডাক্তার। এমন অবস্থায় সন্তানকে জঙ্গলে ফেলে আসলেন এই মা। এই কাজে তার নিজের মাও সঙ্গ দিয়েছেন।

১০ জুলাই বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে বন্ড দিয়ে শিশুকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান তিনি।পরে সুযোগ বুঝে রাতের অন্ধকারে ফেলে এসেছিলেন জঙ্গলে। শ্বশুরবাড়ি ফিরে স্বামী-সহ সকলকে জানিয়েছিলেন মেয়ে মারা গেছে।

কিন্তু ১২ তারিখ ভোরে ওন্দার আমড়াতলা শাল জঙ্গলে ফল, কাঠ সংগ্রহে গিয়ে কান্না শুনে মেয়েটিকে উদ্ধার করেন কিছু আদিবাসী মহিলা। শরীরে জন্তু জানোয়ারের আঁচড়ের দাগ ছিলো। আবারও তাকে নিয়ে যাওয়া হলো বাঁকুড়া মেডিক্যালে। চিকিৎসক ও জেলার প্রশাসনের চেষ্টায় পাওয়া গেল তার বাবা-মাকে। চাইল্ডলাইন মারফত ডেকে পাঠানো হল তাঁদের।

মেয়েটির বাবা, দুর্গাপুরের বাসিন্দা ও পেশায় দুধের ব্যবসায়ী। তাঁর স্ত্রী বলছেন, ‘‘ছেলে চেয়েছিলাম। আবার মেয়ে হল। তার উপরে অসুস্থ। সহ্য হচ্ছিল না। তাই ফেলে এসেছিলাম।’’

বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান এবং অর্থোপেডিক্সের বিভাগীয় প্রধান রণদেব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মা মানসিক ভাবে শিশুটিকে মেনে নিতে পারছেন না। শয্যার পাশে বসে রয়েছেন, অথচ মেয়েকে দুধও খাওয়াচ্ছেন না। সব করছেন নার্স ও চিকিৎসকেরা।

ওই মায়ের মানসিক কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে। সোমবার ওই মা বলেন,‘‘আমার জায়েরও দু’টো মেয়ে। আমারও চার বছরের মেয়ে আছে। ভেবেছিলাম, বংশে বাতি দেওয়ার লোক আসবে। ছেলের মা হলে সংসারে আলাদা খাতির হবে। এখন বুঝতে পারছি, ভুল করেছিলাম। সবাই বকাবকি করছে। আসলে মাথার ঠিক ছিল না।’’

কন্যাশ্রী, বেটি বাঁচাও-এর মতো রাজ্য ও কেন্দ্রের একাধিক প্রকল্প, অনেক প্রচার সত্ত্বেও সমাজের একটা অংশে এখনও পুত্র সন্তানের আকাঙ্ক্ষা কতো তীব্র, তারই একটি একটি উদাহরণ এই ঘটনা। মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল বলেন,‘‘এ ক্ষেত্রে মাতৃত্বের থেকে বড় হয়ে উঠেছিল মাতৃত্বের মাধ্যমে নিজের প্রাধান্য, গুরুত্ব ও প্রতিপত্তি স্থাপন করা। যা তিনি ছেলের মা হয়ে করতে চেয়েছিলেন। বাকি সব তাঁর কাছে গৌণ ছিল।’’

বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “শিশুটির স্বাস্থ্যের উন্নতি ব্যাপারেই এখন আমরা বেশি চিন্তিত। পরবর্তী পদক্ষেপ কী করা হবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।’’