বর্তমান সময়ের আলোচিত ইন্টারনেটভিত্তিক ব্লু হোয়েলসহ বিভিন্ন মরণখেলার গেটওয়ে লিংক ছয় মাসের জন্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দেশের মুঠোফোন অপারেটরদের রাত্রিকালীন বিশেষ ইন্টারনেট অফারও বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিভাইসভিত্তিক অ্যাডিকশনের মানসিক রোগের প্রতীক এসব গেম। ‘ব্লু হোয়েল’ গেমে খেলোয়াড়দের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিভিন্ন কাজ করতে দেওয়া হয়, শুরুতে হালকা কিছু কাজ দেওয়া হলেও ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর সব কাজ দেওয়া হয়। সব শেষে চূড়ান্ত কাজ হিসেবে খেলোয়াড়কে আত্মহত্যা করতে বলা হয় বলে জানা গেছে। ২০১৩ সালে রাশিয়ায় ‘এফ৫৭’ নামে যাত্রা শুরু করা গেমটি খেলে বিভিন্ন দেশে কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। ‘ব্লু হোয়েল’ গেমে বাংলাদেশেও আত্মহত্যার খবর গণমাধ্যমে আসে, যদিও বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়। নগর সভ্যতার এই যান্ত্রিক সময়ে, খোলা মাঠ, দুরন্তপনা হারিয়ে যাওয়ার এই সময়েই ‘ব্লু হোয়েলের’ মতো মনোবিকারের আবির্ভাব, বিস্তার। বিশ্বজুড়ে যা বড় উদ্বেগের কারণ। আধুনিকতার অবিরাম ছুটে চলায় বিচ্ছিন্নতাবোধও প্রবল। আর এমন একটি প্রতিযোগিতামুখর সময়ে বাচ্চাদের স্মার্ট করার নামে আসক্ত করা হচ্ছে ব্লু হোয়েল টাইপ বিভিন্ন গেমের মতো অসুস্থতায়। মনোবিকার কতটা প্রকট হলে শৈশব-কৈশোরের উচ্ছ্বলতা ম্লান হতে পারে এসব প্রাণঘাতী ও আসক্তি ছড়ানো গেমে। বিষয়টি নিয়ে পরিবারকে সচেতন হতে হবে। শিশু-কিশোরদের প্রতি অভিভাবকদের আরও মনোযোগ দিতে হবে, তাদের মধ্যে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার প্রয়াস নিতে হবে বলে আমরা মনে করি। মানবিকতা বোধ জাগ্রত করতে, বিকাশ ঘটাতে বইয়ের বিকল্প নেই। আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীতে আমরা দেখেছি বইয়ের প্রতি তার ভালোবাসার কথা। মহান বিপ্লবী এর্নেস্তো চে গুয়েভারারর কথা কেনা জানে? ৯ অক্টোবর ছিলো কোটি কোটি মানুষের নিরন্তর অনুপ্রেরণার উৎস এই মহামানবের মৃত্যুবার্ষিকী। বইয়ের জাদুকরী ক্ষমতার উদাহরণ হতে পারেন তিনি নিঃসন্দেহে। শৈশবে পারিবারিকভাবেই তিনি পেয়েছিলেন তিন হাজারেরও বেশি বই। বইপ্রেমী এই মহান বিপ্লবী সম্পর্কে চিলির বিখ্যাত কবি পাবলো নেরুদা বলেছিলেন, ‘আমার কাছে চে গুয়েভারা এমন এক ভাবুক, সাহসিক লড়াইয়ে যিনি অস্ত্রের পাশে কবিতাও রাখতেন।’ তাই মানুষের বিকাশ ঘটাতে, মহানদের কাতারে তাকে অধিষ্ঠিত করতে বইয়ের কোন বিকল্প নেই। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বই পড়িয়ে আলোকিত মানুষ গড়ার কথা বলে আসছেন। তার বক্তব্য, ‘বই পড়লে যোগ্যতা অর্জন করা যায়। যোগ্যতা অর্জন করতে পারলে সমাজ রাষ্ট্রসহ সব জায়গায় আলোকিত মানুষ হওয়া সম্ভব।’ পালান সরকারের কথাও আমরা জানি। একুশে পদকে ভূষিত রাজশাহীর এই ব্যক্তি এলাকার মানুষকে বইপ্রেমী করে তোলার জন্য নিজেই হয়ে উঠেছিলেন একটি ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি। এসব মহামানব ও কীর্তিমানদের দেখানো পথ ধরে ঘোরগ্রস্থ, অসুস্থ সময় থেকে ভবিষ্যত প্রজন্মকে বের করে আনতে পারে বই। বইয়ের আলোতে দূর হোক ব্লু হোয়েলের মতো মনোবিকার আর আসক্তি।