অবশেষে ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম শামীমকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঋণ বিতরণের দায়ে তাকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ফারমার্স ব্যাংকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা চ্যানেল আই অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন: ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ (১) ধারা অনুযায়ী মঙ্গলবার এ অপসারণ আদেশ পাঠানো হয়েছে। ফারমার্স ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই চিঠি গ্রহণ করেছে।
এর আগে নানা অনিয়মের দায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে গত ২৭ নভেম্বর ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী।
গত ২৬ নভেম্বর এ কে এম শামীমকে এমডির পদ থেকে কেন অপসারণ করা হবে না- জানতে চেয়ে নোটিশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে নোটিশের সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় গত ১৩ ডিসেম্বর তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসানের নেতৃত্বে এমডিদের অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্থায়ী কমিটির মুখোমুখি করা হয়। ওই কমিটি শামীমের কাছ থেকে সন্তোষজনক জবাব না পেয়ে তাকে অপসারণের বিষয়ে গভর্নরের কাছে সুপারিশ করলে গভর্নর তাতে সায় দিয়েছেন।
এর আগে প্রায় একই কারণে গত ৬ ডিসেম্বর এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের এমডি দেওয়ান মুজিবুর রহমানকে অপসারণ করা হয়। এছাড়া গত বছরের ৩০ জুন অগ্রণী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ আবদুল হামিদ এবং ২০১৪ সালের ২৫ মে বেসিক ব্যাংকের এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়।
রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া নতুন ৯ ব্যাংকের একটি হলো ফারমার্স ব্যাংক। ২০১৩ সালে কার্যক্রম শুরুর পরই ঋণ বিতরণসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে ব্যাংকটি। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনে ব্যাংকটির প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ঋণ অনিয়ম ধরা পড়ে। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৩৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশই খেলাপি। মার্চ-জুন সময়ে ব্যাংকটি খেলাপি গ্রাহকদের থেকে মাত্র ৭ কোটি টাকা আদায় করেছে। শীর্ষ ১০ খেলাপি গ্রাহকের কাছেই ব্যাংকটির পাওনা ১৩৪ কোটি টাকা। ফলে চরম তারল্য সংকটে পড়েছে ব্যাংকটি।
সম্প্রতি তারল্য সংকট মেটাতে ব্যাংকটির নতুন পরিচালনা পর্ষদ ৫শ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য ৯ শতাংশ সুদ হারে বাজার বন্ড ছাড়ে। কিন্তু তাতে গ্রাহকদের সাড়া না পেয়ে সুদ হার ১০ শতাংশে উন্নীত করার পদক্ষপ নেয়া হয়।