চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

অন্যতম হোতা পাকিস্তানি ইউসুফ ভাট

২০০৪ সালে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলার অন্যতম হোতা পাকিস্তানি জঙ্গি ইউসুফ ভাট। ভয়ঙ্কর এই জঙ্গি ২১ আগস্টের নারকীয় হামলা ছাড়াও আরো চারটি হামলার সাথে জড়িত। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তারেও কাজ করেছে এই জঙ্গি।

নারকীয় হামলার মূলহোতা আবু ইউসুফ ভাট আরো কিছু নামে পরিচিত ছিল, যেমন: আব্দুল মাজেদ ভাট এবং আব্দুল মজিদ। জন্মসূত্রে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের বাসিন্দা সে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই নিয়ন্ত্রিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুল মুজাহিদিনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ইউসুফ।

৯০ দশকে কাশ্মীর ছেড়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে চলে যায় ইউসুফ, তাকে নাগরিকত্ব দেয় পাকিস্তান। হিযবুল মুজাহিদিনের নেতা সৈয়দ সালাউদ্দিনের নির্দেশে ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকা সফর করে ইউসুফ ভাট।

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন তাকে আবার বাংলাদেশে আসতে বলে।

ইউসুফ ভাটের জবানবন্দি থেকে  জানা যায়, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও তাজউদ্দিন দুজনই মাজেদ ভাটের জঙ্গি তৎপরতায় সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। ২০০৩ সালে দুজনই ইউসুফ ভাটকে জানায়, তাদের লোকজন আছে। তারা পাকিস্তান থেকে আসা গ্রেনেড ও বিস্ফোরক ভারতে পাঠাতে পারবে। তাজউদ্দিন সেসময় ইউসুফ ভাটকে বলে, এখন বিএনপি ক্ষমতায় এবং তার ভাই পিন্টু মন্ত্রী। কাজেই যেকোন কাজ করা যাবে। আর মুফতি হান্নান বলে, তার লোক আছে, তারা যেকোন কাজ করে দিতে পারবে।

ইউসুফ ভাট জবানবন্দিতে জানায়, বাংলাদেশে অবস্থান করাকালে সে পাকিস্তান থেকে আনা গুলি সংগ্রহ করে তাজউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে নিরাপদে বাসায় আসত। ইউসুফ ভাটকে সিরাজগঞ্জের নিমতলী গ্রামের নাহিদ লায়লার সঙ্গে বিয়ের ব্যবস্থা করে দেয় তাজউদ্দিন। বিয়ের পর মাজেদ ভাট তার স্ত্রীকে নিয়ে মোহাম্মদপুরে বসবাস করতে থাকে। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সে ঢাকায় ছিল। তার বাসায় গুলি ও বিস্ফোরকদ্রব্য রাখা হতো। সে সবসময় ভয়ে থাকত। কিন্তু তাজউদ্দিন তাকে বলত, পুলিশ কিছুই করবে না।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ইউসুফ আরো জানায়, হামলায় ব্যবহার হওয়া গ্রেনেড পাকিস্তান থেকে জাহাজ যোগে চট্টগ্রামে আসে, পরে তা ঢাকায় আনা হয়।

ইউসুফ বলে, তার সংগঠন হিজবুল মুজাহিদীনের আমির সৈয়দ সালাউদ্দিনের সঙ্গেও তাজউদ্দিনের যোগাযোগ ছিল। কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই পাকিস্তানি জঙ্গিরা এদেশে আসা-যাওয়া করত। তারা তাজউদ্দিনের বাসায় থাকত। আবার নির্বিঘ্নে দেশে ফিরে যেত। এসব জঙ্গি ও জঙ্গি নেতা বিমানবন্দরে এলে তাদের গ্রহণ করে বাসায় নিয়ে যেত তাজউদ্দিন। অথবা নিরাপদ কোন স্থানে নিয়ে যেত। ইউসুফও বাংলাদেশে আসার পর প্রথমে তাজউদ্দিনের বাসায় ওঠে। ওই বাসার পাঁচতলায় থাকত সে।

২০০৪ সালের ২১ মে সিলেট, একই বছরের ২১ জুন সুনামগঞ্জে, ৭ আগস্ট আবারো সিলেটে এবং পরের বছর ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের গ্রেনেড হামলারও হোতা ইউসুফ।

২০০৯ সালের জুনে সিরাজগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয় এ জঙ্গিকে। বর্তমানে সে কাশিমপুর কারাগারে রয়েছে।