সেই ১৯৭৭ সালের ২০ জুলাই জন্ম নেয় পাক্ষিক ‘ক্রীড়াজগত’। সময়ের পরিমাপে আজ তা ৪০ বছর পূর্ণ করল। এই দীর্ঘ পথচলায় পাক্ষিকটি শুধু যে দেশের ক্রীড়া ইতিহাসের অংশ হয় উঠেছে তাই নয়; ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এবং রেখে চলেছে। তার এ পথচলায় নিউজপ্রিন্ট থেকে হোয়াইটপ্রিন্ট তারপর সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেমন নিজেকে পাল্টে রঙিন করেছে; ঠিক তেমনি পাল্টেছে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের চিত্রপটও। আর এই পরিবর্তনের চাক্ষুষ সাক্ষী ক্রীড়াজগত। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় পত্রিকাটি বাজারে এলেও জনপ্রিয়তার শীর্ষে থেকে দীর্ঘ পথচলার এমন দৃষ্টান্ত বাংলা ক্রীড়া পত্রিকার জন্য একটি মাইলফলক। যে পথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে অনেক গৌরব, স্মৃতি আর ইতিহাস। অনেক প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মিশেল বুকে ধারণ করে ক্রীড়াঙ্গনের মিলনস্থল হয়ে আছে পত্রিকাটি। দেশ স্বাধীনের আগে-পরে শুরুতে ক্রীড়াচর্চার ক্ষেত্রে যেন কোন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল না। সুযোগও ছিল সীমিত। একটি গণ্ডির মধ্যে আটকে ছিল ক্রীড়াক্ষেত্র। পরে স্বাধীন বাংলাদেশ সমৃদ্ধির দিকে এগোতে থাকলে নতুন উৎসাহ ও উদ্যম নিয়ে শুরু হয় ক্রীড়াঙ্গনের পথচলা। লাল-সবুজের পতাকাটি নানা ক্ষেত্রে সগৌরবে উড়তে শুরু করে ক্রীড়াবিদদের সাফল্যে ভর করে। তখন এসে যায় নতুন প্রশ্ন- কোন খেলাকে গুরুত্ব দিতে হবে, অবকাঠামো কেমন হবে ও আন্তর্জাতিক পরিসরে যুক্ত হওয়ার পথপরিক্রমা কী। এসব নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে ইতিবাচক ও গঠনমূলক নানা আলোচনা হতে থাকে। সেগুলোকেই এক ছাতার নিচে আনার কাজটা করে ক্রীড়াজগত। ধীরে ধীরে অংশগ্রহণের পরিসর বেড়েছে। ক্রীড়া সাংবাদিকতার পরিমণ্ডলও বাড়তে থাকে তাল মিলিয়ে। আলোকতলে আসতে থাকে ক্রীড়াক্ষেত্রের নানা সমস্যা ও উত্তরণের পথ। উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা আর দিকনির্দেশনার বিষয়টি সঙ্গী করে এগোতে থাকা ক্রীড়াজগত তাতে হয়ে ওঠে ক্রীড়াঙ্গনের মুখপাত্র। ক্রীড়াঙ্গনে তারকা তৈরির ক্ষেত্রেও ক্রীড়াজগতের অবদান অপরিসীম। এক সময় এদেশের ক্রীড়াবিদদের ব্যক্তিগত জীবন, অন্তরঙ্গ ও রঙিন ছবি ছাপা হত না। ক্রীড়াজগত সেই প্রথা ভেঙে দেয়। এতে পাঠকরা যেমন ক্রীড়াবিদদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ পেয়েছেন, তেমনি পাঠকদের অন্তরেও স্থায়ীভাবে গেঁথে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন ওই ব্যক্তিত্বরা। এভাবেই সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে ক্রীড়াঙ্গনে জৌলুস বাড়াতে অবদান রেখেছে ক্রীড়াজগতের ছাপার হরফ। হয়ে উঠেছে ক্রীড়াক্ষেত্রের দর্পণ। যে দর্পণের পরতে পরতে গাঁথা আছে লাল-সবুজের এগিয়ে চলার ইতিহাস। সময়ের সঙ্গে ক্রীড়াক্ষেত্রে সাফল্য যেমন বেড়েছে, প্রিন্ট মিডিয়ার দাপটও বেড়েছে। কিন্তু নিজের জায়গাটায় দাপটের সঙ্গে টিকে আছে ক্রীড়াজগত। ৪১ বছরে পা দিয়ে নতুন মাইলফলকেরও শপথ নিয়েছে পত্রিকাটি। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আসছে অনলাইন মাধ্যমে। এখন বলতে গেলে সবার হাতে হাতে মোবাইল। চোখের পলকে সারা বিশ্বের খবর। তাই সময়ের দাবি মিটিয়ে নিজেদেরও সেভাবে উপস্থাপন করার পরিকল্পনা করছে ক্রীড়াজগত। আমরা মনে করি, ক্রীড়াজগত অনলাইন জগতের নতুন চ্যালেঞ্জেও মাথা উঁচু করে এগিয়ে চলবে। ক্রীড়াজগতের জন্য আমাদের শুভকামনা।