চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সিজারকে ফিরিয়ে দিন

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিখোঁজ শিক্ষক এবং গবেষক মোবাশ্বার হাসান সিজারকে ফিরে পেতে ফেসবুকে তার বোন তামান্না তাসমিন আশাবাদ ব্যক্ত করে তার সঙ্গে কাটানো নানা স্মৃতিচারণ করেছেন। সিজারকে খুঁজে ফিরিয়ে দেয়ার প্রবল আকুতি জানিয়ে ফেসবুকে ছবিসহ এক দীর্ঘ আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।

সেখানে দেখা যায়, সিজার ছবি আঁকছেন। সবার মুখেই হাসি। ছবির সঙ্গে স্ট্যাটাসে তামান্না লিখেছেন: ‘‘মোবাশ্বারকে ফিরিয়ে দিন। বাংলাদেশের অন্য মধ্যবিত্ত পরিবারের মত আমাদের সন্তান, বাবা মার প্রতি ভালোবাাসা প্রকাশ করার জন্য আমরা কখনো বলি না ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’। এটা আমাদের রীতিতেও নেই। প্রতিদিনের অঙ্গভঙ্গির মধ্যে  আমাদের ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে। যেমন: কোথায় আছো ?  কখন আসবে? তোমার সব কিছু গোছানো হয়েছে?  তোমার ফোনে কি পর্যাপ্ত চার্জ আছে? তোমার কি দুপুরের খাবার হয়েছে? তোমাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে, তুমি কি অসুস্থ? কেন ঠিক সময় মত ঔষুধ খাওয়নি? তোমার কোন কিছু লাগলে কল করো? তুমি কি ঠিক মত পেীঁছেছো?

আমরা যখন মারামারি করেছি, আমরা যখন ভালোবাসার কথা জানিয়েছি তখনও সর্বোচ্চ দিয়ে করেছি। আমরা  এখন চিন্তায়  ঘুমহীন রাত কাটায়। আমরা আমাদের কাটানো সময়, অভ্যাস, প্রিয় বিষয়গুলো কে স্মরণ করি। আমরা ছোট পরিবার হিসাবে চারজন চারজনের সিরিয়াস বা সামন্য ব্যাপার খেয়াল রাখা, প্রত্যকের অভ্যাসেও খুব পরিচিত ছিলাম। আমরা প্রত্যকের পছন্দের খাবার জানতাম, মেডিসিন, ঘুমানোর সময় সম্পর্কে ভালো করে জানতাম।

এটা অনুমান করা খুবই সহজ যে, একটি পরিবারের একজন ১ সদস্য মাস ধরে নিখোঁজ থাকলে কতটা যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এটা অনুমান করা অসম্ভব যে তাকে ছাড়া আমরা প্রতিটা মুহূর্ত কতটা কষ্টের মধ্যে দিয়ে পার করছি। আমরা তাকে ছাড়া কিভাবে নি:শ্বাস নিচ্ছি।

আমার মা তার রুম, জামা কাপড়, তার ব্যাবহারের সবকিছু প্রতিদিন  খুব যত্নসহকারে পরিস্কার করে। মা মোবাশ্বারের ফিরে আসা নিয়ে প্রতিদিন জানালার পাশে বসে কথা বলে। বাবা তার ফিলে আসা নিয়ে মানসিক ভাবে খুব ভেঙ্গে পড়েছে।হয়তো তারা হাসছে কিন্তু সেই হাসি তাদের চোখকে স্পর্শ  করছে না।

মানুষ আমাকে যখন জিজ্ঞেস করে তুমি কি ভাবে সহ্য করছো? আমি এই প্রশ্নের কোন উত্তর খুজে পাইনা। সত্যি হলো তার ফিরে আসার স্বপ্ন আমাদের এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে। প্রতি রাতে মোবাশ্বারের ফিরে আসার স্বপ্ন নিয়ে ঘুমাতে যায়। তার অমায়িক ব্যক্তিত্ব অাবারো আমাদের পরিবারের সবার মুখে হাঁসি ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।আমার পিতামাতা আবার খুশি হবে।

প্রতিদিন সকালে আমরা আশাহত হই। কিন্তু এখনো আশা ছাড়িনি। আমরা দোয়া করি….।’’

গত ৭ নভেম্বর বিকেলে কর্মস্থল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বনশ্রীর বাসার উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার পর থেকেই মোবাশ্বের হাসান সিজার ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন। ওইদিন সকাল ৭টায় কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন তিনি। সেদিন সন্ধ্যা পৌনে সাতটা থেকে তার মুঠোফোনটি বন্ধ রয়েছে।