বিদেশে থেকে স্বর্ণ আমদানি করতে ব্যবসাবান্ধব নীতিমালা না করা পর্যন্ত কোন স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে হয়রানি না করার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) বলছে, ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে আগামী অর্থবছরের মধ্যেই যুগোপযুগি নীতিমালা করতে হবে, অন্যথ্যায় ব্যবসায়ীদের ভাগ্য নির্ধারণে বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে তারা।
বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ভিআইপি লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সমিতির সদস্যরা।
স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা ও জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের হয়রানি না করার দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বাজুসের সভাপতি গঙ্গাচরণ মালাকার, সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা প্রমুখ।
সমিতির দাবি-দাওয়া সংবলিত লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মুখপাত্র দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন।
তিনি বলেন, বর্তমান আইন অনুযায়ী লেটার অব ক্রেডিট-এলসির মাধ্যমে স্বর্ণ আমদানি করা অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। বাংলাদেশ ব্যাংক বা কোনো প্রতিষ্ঠান জুয়েলার্সদের স্বর্ণ সরবরাহ করে না। তাই ব্যবসা টিকে রাখতে একটা যুগোপযোগি নীতিমালা চাই। কারণ আমরা ইতিহাস হতে চাই না।
“আগামী ১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেটে স্বর্ণ আমদানির সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে। নীতিমালা না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনও জুয়েলারি ব্যাবসায়ীকে হয়রানি করা যাবে না। অন্যথায় বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে।”
সম্প্রতি আপন জুয়েলার্সের বিভিন্ন শাখা থেকে আড়াই শ কোটি টাকার যে সোনা জব্দ করা হয়েছে, তা অবৈধ বলছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। এ বিষয়ে বাজুস সদস্যরা বলছেন, আপন জুয়েলার্সের স্বর্ণ বৈধ বা অবৈধ কিনা তা নির্ধারণ করবেন সর্বোচ্চ আদালত। এর আগে আমরা বা কেউ অবৈধ বলতে পারে না।
এলসির মাধ্যমে কেন স্বর্ণ আমদানি করা হয় না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাজুসের দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এলসির মাধ্যমে স্বর্ণ আমদানি হয়নি। এমনকি আমি নিজেও অন্তত দশবার এলসি খুলতে গেছি। পারিনি। এলসির মাধ্যসে স্বর্ণ আমদানি করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। সেজন্য তাঁতি বাজারের পোদ্দারদের কাছ থেকে এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে আসা স্বর্ণ কিনে ব্যবসা করা হয়।
এভাবে স্বর্ণ ব্যবসা বৈধ, না অবৈধ-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বর্ণ ব্যবসা বৈধ। যদি বৈধ না হয় তাহলে আমরা সরকারকে কিভাবে ভ্যাট দেই। এছাড়া সরকার কখনও বলেনি স্থানীয় ব্যবসায়ী বা প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয় আসা স্বর্ণ কেনা যাবে না। সরকার যেভাবে নীতিমালা দেবে, সেভাবেই ব্যবসা করব।
এ সময় জুয়েলার্স সমিতির সদস্যরা জানান, সারাদেশে ১৭ হাজার জুয়েলার্সের নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মালিক শ্রমিক মিলিয়ে প্রায় ২৮ লাখ মানুষ এই স্বর্ণ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কাজেই তাদের হয়রানি করলে সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে।
এতদিন পর কেন স্বর্ণ আমদানির নীতিমালার দাবি করছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে বাজুস সদস্যরা বলেন, ২০০০ সাল থেকে বেশ কয়েকবার নীতিমালা করার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু সরকার কর্ণপাত করেনি।
বনানীর ধর্ষণ ও আপন জুয়েলার্স সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। এ সংবাদ সম্মেলনের সঙ্গে ওই ঘটনার কোন সম্পর্ক নেই।