দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করতে মিরসরাই অর্থনৈতিক জোনে প্রায় ২শ ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে অ্যাডভান্স স্কিল ডেভলপমেন্ট নামে একটি প্রকল্প করার প্রস্তাব দিয়েছে বিশ্বব্যাংক গ্রুপ।
মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বেজা সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী।
সিটি ইকোনমিক জোনকে চূড়ান্ত লাইসেন্স দেয়ার জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বেজা। এর আগে এই গ্রুপকে প্রাক-যোগ্যতা সনদপত্র দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে পবন চৌধুরী বলেন, দক্ষ মানবশক্তি গড়ার লক্ষে মিরেরসরাই অর্থনৈতিক জোনে অ্যাডভান্স স্কিল ডেভলপমেন্ট নামে একটি প্রকল্প করার প্রস্তাব দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপ। সংস্থাটি এ প্রকল্পে প্রায় ২শ ৫০ কোটি টাকা ব্যয় করে কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে সহায়তা করবে। সেজন্য সংস্থাটিকে জমি দেয়াসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুবিধা দিবে বেজা।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক জোনগুলোতে দেশিয় কোনো প্রতিষ্ঠান দক্ষ মানব শক্তি তৈরি করতে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করতে চাইলে তাদের আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। দক্ষ মানবশক্তি তৈরিতে বিভিন্ন গবেষণায় প্রতি বছর ৫ কোটি টাকা দিতে প্রস্তত রয়েছে বেজা।
সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, সিটি ইকোনোমিক জোনে চলতি বছর ১০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হবে। ২০১৯ সালে তা দ্বিগুণ অর্থাৎ ২০ কোটি ডলার এবং ২০২০ সালে ৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হবে। আর এভাবেই বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। দেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগও করা হবে এই জোনে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে খাদ্য জাতীয় পণ্য উৎপাদন করা হবে। এরপর চাহিদা অনুযায়ী অন্যান্য পণ্যও উৎপাদন করা হবে।
সিটি গ্রুপের অতীত ইতিহাস টেনে গ্রুপের এই কর্ণধার বলেন, পাকিস্তান আমলে মাত্র আট কাঠা জমি নিয়ে একটা কারখানা প্রতিষ্ঠা করি। ওই সময় ৫০ থেকে ৬০ টাকা খরচ করে একটা কারখানা করেছি। সেই পুঁজি দিয়েই বর্তমানে সিটি গ্রুপের এই অবস্থান। অক্লান্ত পরিশ্রম আর চেষ্টায় এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, এই পর্যন্ত ১৭ টি অর্থনৈতিক জোনকে প্রাক-যোগ্যতা সনদপত্র দেয়া হয়। আর সিটি গ্রুপসহ মোট ৬টি গ্রুপকে চূড়ান্ত সনদপত্র দেয়া হয়। এর মাধ্যমে সিটি ইকোনমিক জোন বিদেশী বিনিয়োগ আনার মাধ্যমে জিডিপিতে অবদান রাখবে বলে প্রত্যাশা করি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সিটি ইকোনমিক জোন দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়ন তথা শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও জিডিপি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে বেজা মনে করে। এ জোনের মাটি ভরাট, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছে। ইতোমধ্যে সিড ক্রাশিং, অটোরাইস অ্যান্ড ডাল মিল এবং এডিবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ নামে ৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি করতে এলসি খুলেছে।
সিটি ইকোনমিক জোন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে ২ কিমি ভেতরে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নারায়নগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৭৮ একর জমির উপর অবস্থিত।
অনুষ্ঠানে সিটি গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ জোনে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগসহ প্রয়োজনীয় পানি শোধানাগার প্লান্ট, বর্জ্য পরিশোধানাগার প্লান্ট, অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা সরবরাহ করা হবে বিনিয়োগকারীদের। প্রস্তাবিত শিল্পখাতগুলোর মধ্যে ফুড ও বেভারেজ এবং রপ্তানি জাতীয় শিল্প রয়েছে। এখানে প্রথম বছরে দক্ষ-অদক্ষ, নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট ৩ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ক্রমান্বয়ে পরবর্তীকালে ৫ বছরের মধ্যে ২০ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
বেজার নির্বাহী সদস্য এমদাদুল হক বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল এখন আর স্বপ্ন নয়, এটি বাস্তব। বেসরকারি খাতে ১৭ জনকে প্রাক-যোগ্যতা সনদপত্র দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে পবন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন বেজার নির্বাহী সদস্য ড. এম এমদাদুল হক, মো. আইয়ুব, সিটি গ্রুপের পরিচালক হাসান ও শম্পা রহমান প্রমুখ।