দেশের উদীয়মান তথ্য প্রযুক্তি খাত থেকে ২০১৮ সালে নয়, ২০১৭ সালেই এক বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় সম্ভব বলে জানিয়েছেন প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারকরা। তারা বলছেন, ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড বা প্রযুক্তি বিষয়ক পণ্যের প্রদর্শনীতে ব্যাপক সাড়া পেয়ে তাদের ধারনা, চলতি বছরেই এক বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আয় সম্ভব হবে। আর প্রয়োজনীয় নীতিগত সহায়তা দেয়া হলে এ খাত ভবিষ্যত অর্থনীতির জন্য শক্ত ভীত হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করেন তারা।
প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, এবার চারদিনব্যাপী ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে প্রতিদিন এক লাখ দর্শক প্রত্যাশা করা হলেও সাড়া পাওয়া গেছে দ্বিগুণ। প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মানুষ প্রযুক্তি পণ্য, দেশের ডিজিটাল প্রক্রিয়ার অবস্থান ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন সেমিনারে অংশ নিয়েছে।
সম্প্রতি শেষ হয়েছে তথ্য প্রযুক্তি খাতের পণ্য প্রদর্শনের সবচেয়ে বড় আরেয়াজন ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড। এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এক্সপোর উদ্দশ্য ছিল ৫ লাখ লোককে দেশের আইসিটি তথা ডিজিটাল উন্নয়ন সম্পর্কে জানানো। কিন্তু এক্সপোতে দর্শক কাউন্টার মেশিনের ডাটা অনুযায়ী দেখা গেছে, সাড়ে ৮ লাখ মানুষ এখানে এসেছে।
তথ্য প্রযুক্তি খাতের বেসরকারি সংগঠন বেসিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে এই খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৮০ কোটি ডলার। সরকারের লক্ষ্য মাত্রা হচ্ছে ২০১৮ সালের মধ্যে এ খাত থেকে ১ বিলিয়ন ডলার আর ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় অর্জন করা।
“আমাদের কাছে আসা তবে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছে ২০১৭ সালের মধ্যেই রপ্তানী আয় ১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে। এটা অবশ্য অর্থনীতির জন্য সুসংবাদ, বলেন আবু নাসের।”
জানা গেছে, বেসিস, বাক্যসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বেসরকারি শীর্ষ সংগঠনগুলো হিসাবে দেশে দেড় হাজারের বেশি আইটি ও আইটিইএস কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের প্রায় ৫শ কোম্পানি রপ্তানির সাথে জড়িত রয়েছে। শুধু বেসিসের রয়েছে ১ হাজার ৮৬ সদস্য কোম্পানি। এরমধ্যে অর্ধেক কোম্পানিকে সক্রিয় হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এক্সপো বিষয়ে বেসিসের সভাপতি মোস্তাফা জব্বার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এই এক্সাপোতে সাধারাণত কোনো পণ্য বেচাকেনার জন্য প্রদর্শন করা হয় না। এখানে কোনো পণ্যের অর্ডারও নেয়া হয় না। শুধু প্রযুক্তির উন্নয়ন কতটা এগিয়েছে তা প্রদর্শনের জন্য এক্সপোর আয়োজন করা হয়।
দেশে প্রযুক্তির উন্নয়ন সম্পর্কে জনসাধারণকে ধারণা দিতেই প্রতিবছর ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এক্সপোর আওয়াজন করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে শুধু বেসরকারি কোম্পানি নয়, সরকারি বিভিন্ন বিভাগে ডিজিটালের ছোঁয়া কতটা লেগেছে তার জানান দেয়া হয়েছে।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসার দ্রুত ছড়িয়ে পড়া-ই হচ্ছে অর্থনীতির উন্নয়ন। কারণ সরকারি সেবা খাত দক্ষ হলে মানুষ অল্প সময়ে সঠিক সেবা পাবে। আর বেসরকারি খাত দক্ষ হলে অর্থনীতির গতি বাড়বে। অতএব এটি প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি রাজীব আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এ খাতটি এখনও ছোট। তবে এখানে শিক্ষিতদের কাজ করার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। যারা খুব দ্রুত সফলতা লাভ করছে। স্বল্প সময়ে বড় অবদান রাখতে পেরেছে তথ্য প্রযুক্তি খাত।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এ খাত যে অর্থনীতির জন্য শক্ত ভীত হয়ে দাঁড়াবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এই জন্য দেশীয় কোম্পানীগুলোর প্রসারে সরকারের সব ধরনের পলিসি সহায়তা দরকার।
এক্সপো অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্য) ওয়াহিদ শরিফ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, তথ্য প্রযুক্তি একটি নতুন খাত। কিভাবে এ খাত থেকে আয় করা যায়, কী কী পণ্য উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে অনেকে জানেন না। এক্সপোতে অনেকগুলো সেমিনারের মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন জটিল প্রশ্নের সহজ সমাধান দেয়া হয়েছে। এর ফলে তারা আরো এগিয়ে যেতে পারবে। যা অর্থনীতি দীর্ঘ মেয়াদী ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে এ খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছিল মাত্র আড়াই কোটি ডলারর মতো। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ কোটি ডলারে। এছাড়া তখন ‘বাংলাদেশে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) খাতে মাত্র ৯শ জন চাকরি করতো। এখন এ খাতে প্রায় ৪৫ হাজার জনবল চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এতেই বুঝা যাচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি খাত অর্থনীতিতে কী ধরনের অবদান রাখতে সক্ষম।