আগামী অর্থবছরের বাজেটে ইন্টারনেট নিয়ে কিছু করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের সমাপনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
মুহিত বলেন: ২০০৮ সালে আমরা ৪ বছরের পরিশ্রমে একটি ইশতেহার তৈরি করি। আমরা সেই ইশতেহার প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিই। তিনি ১২ ডিসেম্বর এই ইশতেহার জনসম্মুখে প্রকাশ করেন। সম্প্রতি আমরা ১২ ডিসেম্বর জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
“এই ইশতেহার বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেশের তরুণ সমাজের হাতে। তাদের নিয়ে আমাদের বিশ্বাস ছিল যে তারা আমাদের ডিজিটাল যুগে পৌঁছে দিতে পারবে। তা আজ সত্যিই বাস্তবায়িত হয়েছে। তাদেরই নেতৃত্বে আমরা ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে পৌঁছে গেছি।”
তিনি আরও বলেন, ইন্টারনেটে এখন আমরা একটি উল্লেখযোগ্য অবস্থানে আছি, নেতৃত্ব দিচ্ছি। এটি সম্ভব হয়েছে তরুণদের জন্য, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্য।
ইন্টারনেটের মূল্যের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ইন্টারনেটের মূল্যের উপর ভ্যাটের বিষয়ে একটি দাবি এসেছে। মোস্তাফা জব্বার আমাকে আগেও বলেছে। আমি কোনোদিন এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করিনি। আমি এবার মন্তব্য করতে চাই কারণ আগামী বছর আমি আমার শেষ বাজেট দেবো। দেখা যাক কী করা যায়।
সমাপনি অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দিতে গিয়ে আইসিটি ডিভিশনের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী বলেন, আইটি সেক্টর যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে করে আমরা যদি ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে আমাদের সকল কর্মকাণ্ড তরুণ সমাজের সামনে তুলে ধরতে পারি, তাহলে আইটি সেক্টরকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।
“চারটি মূল বিষয়কে সামনে রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এগুলো হলো ই-গভর্নেন্স, কানেক্টিভিটি, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং আইটি ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট। ই-গভর্নেন্সের কারণে সরকারের অনেক সেবা এখন খুব সহজ হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এশিয়ান সুপার হাইওয়ের মাধ্যমে সুপারহাইওয়েতে যুক্ত হয়ে নিরবিচ্ছিন্ন কানেক্টিভিটি দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমানোর জন্যও চেষ্টা চলছে।”
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড সার্ভিসেস (বেসিস) প্রেসিডেন্ট মোস্তাফা জব্বার বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ক্ষমতায় আসে, তখনই ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রথম পর্বের সূচনা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত সিদ্ধান্তে কিছু কিছু যন্ত্রাংশে শুল্ক কমিয়ে আনায় এই মেলায় আমরা ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পণ্য দেখতে সক্ষম হয়েছি।
এ সময় তিনি ইন্টারনেটের উপর সরকারের ভ্যাট ও সারচার্জ কমানোর বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান। শিশুদের অল্প বয়স থেকেই প্রযুক্তি শিক্ষা দিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ারও আহ্বান জানান মোস্তাফা জব্বার।
সমাপনি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রী দিনা নাথ ডঙ্গেল। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে তিনি বলেন: তিন বছর ধরে আমি এ খাতে বাংলাদেশে কর্মকাণ্ড অনুসরণ করছি। দ্রুতই ঢাকা স্মার্ট সিটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে আমার বিশ্বাস।
সভাপতির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন: ইনোভেশন জোনে আমি ‘বন্ধু’ নামে একটি রোবটের সাথে কথা বলেছি যার বয়স মাত্র দুই সপ্তাহ। এই ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে সোফিয়া ছিল, আগামী ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে আমাদের নিজেদের তৈরি সোশ্যাল রোবট থাকবে। এর মাধ্যমে আমরা সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতে চাই।
দেশীয় রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম পাঠাও’র প্রশংসা করে পলক বলেন: দেশে এখন উন্নয়নের কারণে অনেক সময় ট্রাফিক জ্যামে পড়তে হয়, এটা ‘ডেভেলপমেন্ট পেইন’। তবে এরও সমাধান হচ্ছে। জ্যামে পড়লে অনেকেই এখন পাঠাও ব্যবহার করেন। মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণে উবারকে বন্ধ করতে না পারলেও আমাদের রয়েছে নিজেদের কোম্পানি পাঠাও যাকে আমরা বলতে পারি আমাদের ‘উবার’।
পলক আরও জানান, দেশে প্রতি বছর সাড়ে তিন কোটি মোবাইল ডিভাইস এবং ৫ লাখ ল্যাপটপ আমদানি করতে হয়। তবে দেশের কোম্পানিগুলো যদি এসব ডিভাইস তৈরি করতে পারে, তাহলে এখান থেকে আমরা দুই বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পারব।
সমাপনি অনুষ্ঠানে বিশেষ আকর্ষণ ছিল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১১ ক্যাটাগরিতে ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়।
এছাড়া আইসিটি ডিভিশনের আইডিয়া প্রকল্পের আওতায় ৩৭টি স্টার্টআপকে ফান্ড দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।