জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা এবং আন্তর্জাতিক চাপে মিয়ানমার সমঝোতা স্মারক সাক্ষর করলেও অতীত অভিজ্ঞতায় রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। যতক্ষণ তাদেরকে ফেরত নেওয়া শুরু না হবে, ততক্ষণ মিয়ানমার সরকারকে তারা বিশ্বাস করতে চায় না বলেও জানিয়েছেন।
প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিষয়ে নিজেদের উদ্বেগের কারণ হিসেবে রোহিঙ্গারা বলছেন: তাদেরকে ফেরত নিয়ে কোথায় রাখা হবে তা এখনও ধোয়াশা করে রেখেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে কোন ছলচাতুরি না করে মিয়ানমার যদি তাদের নাগরিকত্ব ও জমিজমা ফিরিয়ে দেয় এবং সেখানকার অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মতো সুযোগ সুবিধা দেয় তাহলে মিয়ানমারে ফিরে যেতে তাদের কোন আপত্তি নেই।
রয়টার্সকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় সাইদ হোসেন নামের একজন রোহিঙ্গা বলেন: আমরা ফিরে যাবো, যদি সেখানে আমাদেরকে পুনরায় নিপীড়ন করা না হয় এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়সহ অন্য ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মতো বসবাস করতে দেয়া হয়।
নারুশা নামের একজন রোহিঙ্গা নারী বিবিসিকে বলেন: আমি মিয়ানমার সরকারকে বিশ্বাস করি না। আমার স্বামী তিনবার গিয়ে ফিরে এসেছেন এবং আমি দ্বিতীয়বারের মতো ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছি। মিয়ানমার সরকার সবসময়ই এরকম।
এছাড়া গত সপ্তাহে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসনকে জানান: তারা শুধু মিয়ানমারের বৈধ নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত আছেন। অথচ রোহিঙ্গাদেরকে সবসময় নাগরিকত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমঝোতা স্মারক সই হয়। ২ মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের আবার মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। নেপিডোতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চি’র বৈঠক শেষে এই সমঝোতা স্মারক সই হয়।
তবে মিয়ানমারের পক্ষে কথা দিয়ে কথা না রাখার নজির অনেক। এছাড়া এই ইস্যুতে ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে থাকা সু’চির বিরুদ্ধে নতুন করে নেতিবাচক প্রচারণা শুরু করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির আগে গত কয়েকদিনে সু’চির সমালোচনা করে লেখালেখি শুরু করে দেশটির অনেকগুলো গণমাধ্যম। এটাও রোহিঙ্গাদের আশঙ্কার অন্যতম কারণ।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা আশা করছে, এই সমঝোতা স্মারক রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ, সহায়তামূলক এবং নিরাপদে নিজ দেশ ফিরে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধান এবং তাদেরকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে দিতে যেকোন আন্তর্জাতিক মানের সহায়তা করতে এই সংস্থা প্রস্তুত বলেও জানান এক মুখপাত্র।
তবে মিয়ানমারে এখনও জাতিগত বিদ্বেষ বর্তমান রয়েছে উল্লেখ করে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে সংশয় প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানোর আগে তাদের আশঙ্কার বিষয়গুলো সমাধানের উপর গুরুত্ব দিয়েছে অ্র্যামনেস্টি।
গত ২৫ আগস্ট থেকে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। সমঝোতা স্মারকের আওতায় তাদের ফেরত পাঠাতে ২ মাসের মধ্যে শুরু হবে প্রক্রিয়া।